জাতিসংঘে নিযুক্ত কুটনীতিকদের ভুলের কারণেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি একাত্তরের ২৫শে মার্চের গণহত্যা’, বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। রবিবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা ও আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মত ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ পালনের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা নেই। আমাদের মুখ্য সুযোগ ছিল ২০১৭ সালে। এ সময় জাতিসংঘ যখন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশের কূটনীতিকরা পঁচিশে মার্চের গণহত্যার প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে তুলে ধরে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেননি’। তবে বর্তমান সরকার এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যা ও এই দিনকে ‘আন্তর্জাতক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের বিষয়ে সারা বিশ্বে জনমত গঠনে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নিজের বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত সত্যকে যারা বিতর্কিত করতে চায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ’। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা ৩০ বছর ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে। এখন তারা শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শহীদের সংখ্যাকে বিতর্কিত করতে চায়। তারা কি এখন এক দুই করে শহীদের সংখ্যা হিসেব করছে?’
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ সরকার ‘গরিমসি’ করছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন উঠতে পারে, আওয়ামী লীগ কি করেছে? তারা ক্ষমতায় ছিল ৩০ বছর। তাদের শেকড় অনেক ভেতরে। তবে আমরা জনমত গঠন করতে পারলে কাজটি আমাদের জন্য সহজ হবে। একাত্তরে মুজিবনগর সরকারের বিরোধিতায় খোন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমানের ভূমিকা প্রকাশে একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করা হবে’।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ পালন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যা। এ কারণে কয়েক বছর ধরেই ২৫ মার্চের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও এই দিনকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়াও বিসিএসে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস নিয়ে ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং স্কুল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।