স্টাফ রিপোর্টার : শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণের মামলায় ঈশ্বরদীতে বিএনপির ৩০ নেতাকর্মীর জামিন আবেদন বাতিল করেছেন আদালত। রবিবার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলী উপস্থিত বিএনপির ৩০ নেতা-কর্মীসহ এই মামলার সকল আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, এ কে এম আক্তারুজ্জমান আকতার, সাহাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান শাহীন প্রমূখ।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার প্রধান আসামি ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু এবং অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবীর দুলাল আদালতে হাজির না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
পিপি আক্তারুজ্জামান মুক্তা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সাফাই সাক্ষী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষ কোন সাফাই সাক্ষী হাজির না করে সময় প্রার্থনা করে আবেদন জানান। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলী সময়ের আবেদন বাতিল করে সোমবার সকাল ১০টায় এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুরুর দিন ধার্য এবং হাজির হওয়া ৩০ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায় ঘোষণা করা হবে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি, বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে রেলপথে খুলনা হতে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেনটি প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করা হয়। স্টেশনে ট্রেনবহর যাত্রাবিরতি করলে আবারো হামলা হয়। এ ঘটনায় দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।
পরে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুন ভাবে ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এই মামলার আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করার পর পুলিশ কোন সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্টও দাখিল করে। কিন্তু আদালত সে রিপোর্ট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। পরে সিআইডি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলা নম্বর এসটি ৪২/৯৭।
প্রথম চার্জশিটের ৭ আসামির বাইরে এ মামলায় যাদের নতুনভাবে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মকলেছুর রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র শামসুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বিশ্বাস, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কে.এম.আক্তারুজ্জামান আক্তার, পাকশীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সাহাপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, রেজাউল করিম শাহীন, আজিজুর রহমান শাহীন, সেলিম আহমেদ, পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, বিএনপি নেতা ইসলাম হোসেন জুয়েল, শহীদুল ইসলাম অটল, আব্দুল জব্বার প্রমুখ। আসামিদের মধ্যে গত ২৫ বছরে ওসিয়া, আলী আজগর, খোকন, তুহিন ও আলমগীরসহ ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সোমবার হতে শুরু হওয়া যুক্তিতর্ক শেষে যেকোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা হবে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তা ও গোলাম সাকলাইন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম গ্যাদাসহ কয়েকজন।