খবর সারাদিন রিপোর্ট : করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই সম্প্রতি পোশাক কারখানা চালু করা হয়েছে। কর্মস্থলের কাছে অবস্থানরত স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক নিয়ে, স্বল্প পরিসরে এবং ধাপে ধাপে কারখানা খোলার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও অনেক কারখানার মালিকই তা মানেননি। অন্যদিকে চাকরি রক্ষার জন্য গ্রামে যাওয়া শ্রমিকেরা শিল্পাঞ্চলগুলোতে ফিরতে শুরু করায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিও বাড়ছে। গত ২৬ এপ্রিল নতুন করে কারখানা চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানার ১১ জন শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪১ জন গার্মেন্টস শ্রমিকের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চার জন মারাও গেছেন।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, এ পর্যন্ত যেসব শ্রমিকের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তারা সবাই যে কারখানায় আক্রান্ত হয়েছেন, এটি বলা যাবে না। কেননা, অনেকেই এলাকায় যাওয়ার পরও আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই নিজেদের মতো করে চিকিত্সা নিচ্ছেন।
সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৪১ শ্রমিকের মধ্যে এই এলাকার কারখানায় কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা ২৮। এছাড়া আশুলিয়ায় সাত জন ও গাজীপুরে ছয় জন। এমন আলোচনার মধ্যেই শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) গতকাল জারি করা এক নির্দেশনায় ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলমুখী হওয়ার পথ আরো সহজ হলো। শিল্পাঞ্চলের বাইরে থাকা শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলমুখী না হতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমনকি শ্রম মন্ত্রণালয় আগে থেকে বলে এলেও গতকাল ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, শ্রমিকদের আসতে হলে কারখানার আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ইস্যু নিয়ে আজ শ্রম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সভা হবে। এতে পোশাকশিল্পের মালিকেরাও উপস্থিত থাকবেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম ইত্তেফাককে বলেন, শ্রমিকের নামে অন্যরাও ঢাকায় চলে আসছেন। অন্যরা যাতে শ্রমিকের নামে আসতে না পারেন, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কারখানা খোলার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা না মানার কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, অধিকাংশ কারখানাই যথাযথ প্রস্তুতি ও স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া ২৬ এপ্রিল খুলেছে। এর ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ ছিল, যে এলাকায় সংক্রমণ কম, সেখানে আগে চালু করে ধীরে ধীরে অন্য এলাকায় যাওয়া। এক্ষেত্রে গ্রিন, ইয়েলো ও রেড জোনে ভাগ করার পরামর্শ ছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়ে গেল।’ এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শ্রমিকনেতা ও ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, কারখানায় আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা শতাধিক হবে বলে আশঙ্কা করছি। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও বিষয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বক্তব্য জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হক কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানাননি। সন্ধ্যার পর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানেও আক্রান্তের সংখ্যা বা এ বিষয়ে বিশদ কিছু জানানো হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কারখানাগুলোতে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। কারখানাগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সন্দেহজনক (আক্রান্ত) শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে সাত জন সাভারের, দুই জন গাজীপুরের অপর দুই জন খুলনার। তারা সাভারের হেমায়েতপুরের এজেআই গ্রুপ, কর্ণপাড়া এলাকার আল-মুসলিম গ্রুপ, উলাইলের ডেনিটেক্স লিমিটেড, ঢাকা ডায়নামিক সোয়েটার, এইচআর গার্মেন্টস, গাজীপুরের পার্কস্টার অ্যাপারেলস, টঙ্গীর শান্তা এক্সপ্রেশন লিমিটেড ও খুলনার দুই জন নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন।
এদিকে শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গতকালও বেতনভাতা ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ইস্যুতে গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকার অন্তত ৯টি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন ইত্তেফাককে জানান, কোনো কোনো কারখানায় শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেওয়ার দাবিতেও আন্দোলন করেছেন। মূলত ৬০ শতাংশ সমস্যা বেতন নিয়েই হচ্ছে।
খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় দুই নারী গার্মেন্টস কর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজের (খুমেক) পিসিআর মেশিনে তাদের করোনা শনাক্ত হয়। তাদের বাড়ি দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের খাটাইল গ্রামে। তারা সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে দাকোপের গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।