খবর সারাদিন রিপোর্ট : করোনা দুর্যোগের কারণে ছুটির ফলে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন ১ কোটির বেশি মানুষ। এত মানুষের হঠাত্ করেই জায়গা স্থানান্তরে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মান আরো নেমে গেছে। কল ড্রপ, ইন্টারনেটের কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়াসহ নানা ধরনের সংকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন মাসের জন্য ফ্রি স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) চেয়েছে তিন অপারেটর। তবে এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন। অন্য অপারেটররা বলছে, সংকট জিইয়ে রেখে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চায় গ্রামীণফোন। যদিও তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
গত দুই মাসে গ্রামীণফোনের গ্রাহক কমে গেছে ৭ লাখের মতো। রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কাছে পড়ে থাকা স্পেকট্রাক তিন মাসের জন্য ফ্রি দিতে আবেদন করেছে। এর জন্য তারা ইন্টারনেটের মূল্যও কমিয়েছে। তবে গ্রামীণফোন এই ফ্রি পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, ফ্রি নয়, স্বল্প মূল্যে কিনে নিতে চায়। এই মুহূর্তে ফ্রির জন্য আবেদন করা অপারেটরদের পক্ষে স্পেকট্রাম কেনা সম্ভব নয় জানিয়েছে তারা। রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন রবি ৪ কোটি টাকা করে রাজস্ব হারাচ্ছে। গত এক মাসে তারা ১২০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখন নতুন করে স্পেকট্রাম কিনে সেবা দেওয়া তাদের পক্ষে কতটা সম্ভব?’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফোর-জির স্পেকট্রামের নিলাম হয়েছে দুই বছর হলো। এরপর যে স্পেকট্রাম বাকি রয়েছে, সেটা নেওয়ার জন্য অপারেটরদের বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এখন গ্রামীণফোন বলছে, তারা ন্যূনতম মূল্যে কিছু স্পেকট্রাম কিনতে চায়? সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। আর এটা বিক্রি করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এটা সম্ভব না। এটা জনগণের প্রোপার্টি, সরকার ইচ্ছে করলেই কাউকে এভাবে দিতে পারে না।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করেছি, তিন মাসের জন্য তারা আমাদের ফ্রি দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। এটা মন্ত্রণালয় চাইলেই দিতে পারে।’ তবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের কেন ফ্রি দেব? তারা ভয়েস কল ফ্রি করে দিক, আমি তাদের স্পেকট্রাম দেব। কিন্তু তারা তো সেটা করছে না, তাহলে জনগণের সম্পদ আমরা এভাবে দিতে পারি না।’
সাহেদ আলম বলেন, ‘সরকারের স্পেকট্রাম তো অব্যবহূত পড়ে আছে। সেখান থেকে তো কোনো রাজস্ব আসছে না। তাহলে আমাদের কিছুদিনের জন্য দিলে আমাদের উপার্জনের তো ৫৩ শতাংশ সরকারই পাচ্ছে। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেছেন, ‘এখন গ্রাহকদের ডেটা ব্যবহারের হার বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে কিছু প্যাকজের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমানো হয়েছে।’
একটি অপারেটরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘যেহেতু গত দুই মাসে ৭ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে গ্রামীণফোন, তাই তারা নানা ছলচাতুরি করে গ্রাহক ধরে রাখার চেষ্টা করছে। ফ্রি স্পেকট্রাম পেলে রবি বা বাংলালিংক দ্রুত সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্কের মান উন্নতি করতে পারলেও গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কারণে তারা দ্রুত সেটা পারবে না। ফলে দ্রুত যেন কেউ স্পেকট্রাম না পাই সে কারণে তারা স্বল্প মূল্যে কেনার দাবি জানিয়েছে। কারণ তারা জানে, সরকার স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে চাইলেও অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। ততদিনে হয়তো তিন মাস পার হয়ে যাবে।’
গেল দুই মাসে গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় ৭ লাখ কমেছে। এখন তাদের গ্রাহক ৭ কোটি ৫৮ লাখ। এদিকে দুই মাসে রবির গ্রাহক ৬ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখে। বাংলালিংকের গ্রাহক ৫ লাখ বেড়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। টেলিটকের গ্রাহক সামান্য কমলেও সাড়ে ৪৮ লাখেই আছে। আর দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ৯ কোটি ৪২ লাখ। গ্রামীণফোন এক মেগাহার্ডস স্পেকট্রাম দিয়ে সাড়ে ২০ লাখ, রবি সাড়ে ১৩ লাখ ও বাংলালিংক সাড়ে ১১ লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে এক মেগাহার্ডস স্পেকট্রাম দিয়ে ১ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডও এমনই। ফলে স্পেকট্রাম না বাড়ানো হলে সেবার মান যে বাড়বে না, সেটা বলার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের দরকার নেই।