মোজাম্মেল চৌধুরী : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরীবের তালিকায় নাম উঠা ৩৩৭ জনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। জেলা খাদ্য বিভাগ ও পৌরসভা যাচাই-বাছাই করে তাদের বাদ দেয়। এরআগে তালিকা তৈরীতে অনিয়ম করায় দুই কাউন্সিলর ও এক ডিলার বরখাস্ত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোকর্নঘাট এলাকার তালিকায় অনেক ধনাঢ্যর নাম পায় খাদ্য বিভাগ যাচাই করে। নাজির মিয়ার দুই ছেলে বিদেশে। প্রায় ২ কোটি টাকার মালিক তিনি। বাজারে মার্কেট আছে এরফানুল বারীর। আছে দোতলা বাড়ি। আবদুল হেকিমও মার্কেটের মালিক। বাজারে মার্কেট আছে রোকসানা বেগমের। তিনি আবার কাউন্সিলর প্রার্থী। ধন মিয়ার ৪ ছেলে বিদেশে। আছে পাকা বাড়ি। গোকর্নঘাট বাজারের সবচেয়ে বড় মার্কেটের মালিক সামছুল হক। রবীন্দ্র বর্মনের দুই ভাই থাকেন বিদেশে। তিনশো শতাংশ জমির মালিক তিনি। হোসেন মিয়ার দোতলা বাড়ি,তাতে লাগানো এসি । বাজারে দোকান আছে তার। দুটি মাইক্রোবাসের মালিক শফিক মিয়া। কবির মৃধা বড় ব্যবসায়ী।
বিত্তশালী এই মানুষদের সবার নাম দেয়া হয় করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস সুবিধে ভোগীর তালিকায়। ভিক্ষুক,ভবঘুরে,সাধারন শ্রমিক,দিনমজুর,রিকসা চালক,ভ্যান চালক,পরিবহন শ্রমিক,চায়ের দোকানদার,হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নাম দেয়া হয় তাদের। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: ফেরদৌস মিয়ার নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত কমিটি এই তালিকাটি তৈরী করে। গনমাধ্যমে অন্য আরেকটি ওয়ার্ডের অনিয়মের চিত্র প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ তদন্তে নামে। শুরু হয় পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের তালিকা যাচাই-বাছাই। প্রথম দফায় প্রত্যক ওয়ার্ডে করা ৫’শ জনের নামের তালিকার খোজখবরে সন্ধান মিলে এই ধনপতিদের। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় মোট ২৪ সম্পদশালী সনাক্ত হন। খাদ্য বিভাগের চকিত যাচাইয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহল্লার সর্দার ও দোতলা বাড়ির মালিক কিতাব আলী, ২ ছেলে প্রবাসে এবং ৭ রুমের দুই ইউনিটের বাড়ির মালিক মো: আবদুর রউফ,দোতলা বাড়ির মালিক জীবন সাহা,নেরোজ আলী,সাকিল ও উপল মালাকারের নাম পাওয়া যায় ওই তালিকায়। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সৌদি প্রবাসী তিন ছেলের পিতা বাচ্চু মিয়া, ৩ ছেলে প্রবাসে এবং দেশে সরকারী চাকুরীরত এক সন্তানের মা হেনেরা বেগম,দুই প্রবাসীর পিতা নারায়ন ঋষি,দোতলা বাড়ির মালিক ও ধান ব্যবসায়ী শওকত ওসমান,ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি হারুন অর রশিদ, কাউন্সিলরের পরিবারের সদস্যসহ ৩৩ জন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ডিলারের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজন,কাউন্সিলরের কয়েক ভাই,একাধিক ৫ তলা বাড়ির মালিক ও লন্ডন প্রবাসীসহ ২২ জন,২ নম্বর ওয়ার্ডে ৭জন,৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ তলা বাড়ির মালিক মো: আবু বাকের, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৮জন,৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২জন এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এমন আরো ৭জনের নাম চিহ্নিত হয়।
জেলা খাদ্য অফিস জানায়, দৈবচয়ন ভিত্তিতে ভোক্তা তালিকা যাচাই করে মোট ১৩১ জন সামর্থ্যবান খুজে পান তারা। একইসাথে জেলা প্রশাসক ও ওএমএস কমিটির সভাপতি হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন লিখিতভাবে পৌর মেয়রকে তালিকা যাচাইবাছাই করতে বলেন। এরপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা সামর্থ্যবানদের নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা পাঠায় খাদ্য অফিসে। এরমধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৫জন,৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৪ জন,৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩৫জন,৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৬১জন,৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২২ জন,৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১২জন,১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৭জন,১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫০ জন এবং ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২৪জনের নাম সংশোধন করে তালিকা জমা দেন। সবমিলিয়ে ৩৩৭ জনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে প্রথম দফায় করা ৬ হাজার জনের তালিকা থেকে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবির নাথ চৌধুরী জানান,তালিকা যাচাই বাছাই করে পৌরসভা থেকে তাদের কাছে এখনো সংশোধিত তালিকা দেয়া হচ্ছে। তারা ওই তালিকা অনুসারে নতুন ভোক্তার নামে কার্ড ইস্যু করছেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১৬’শ জন করে এই পৌরসভায় মোট ১৯ হাজার ২’শ জন বিশেষ ওএমএস সুবিধে পাবেন। যদিও তালিকা তৈরীর কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে এই তালিকা তৈরীতে অনিয়মের কারনে ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মাকবুল হোসাইন ও রফিকুল ইসলাম নেহার সাময়িক বরখাস্ত হন। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মো: শাহআলমের ওএমএস ডিলারশীপ বাতিল করা হয়।
শেয়ার করুন