,
শিরোনাম:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় পথচারী নিহত মাদক বিরোধী অভিযান আশুগঞ্জে যুবদল সদস্য সচিবসহ গ্রেপ্তার-২ \ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেলিকপ্টার ও পালকিতে চড়ে বরের বাড়ি আসলেন নববধূ আখাউড়ায় মাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আখাউড়ায় কৃষকদল নেতার সংবাদ সম্মেলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফল ব্যবসায়ী সাইদুর হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদন্ড শর্টগানের ৬৭টি কার্তুজসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিবির দুই কনস্টেবল গ্রেপ্তার অপারেশন ডেভিল হান্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার তারুণ্যের উৎসবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পিঠা উৎসব

কসবায় প্রেমিকাকে ধর্ষণের মূল্য দেড় লক্ষ টাকা।  

Kasba Brahmanbaria Pic 16 07 2020
মোজাম্মেল চৌধুরী : স্কুল জীবন থেকেই মেয়েটি সাইফুলের সহপাঠী। এখন অনার্সে অধ্যয়নরত। দু’জনায় প্রেমের সম্পর্ক। কৌশলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে করেছে শারিরিক মেলামেশা। এসবেরই এক পর্যায়ে দেয় আবাসিক হোটেলে গিয়ে রাত যাপনের প্রস্তাব! এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিয়ের জন্য চাপ দিতেই সাইফুল দেয় গা ঢাকা।অনার্স পড়ুয়া ছাত্রীকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপ দিতে চায় সালিশকারকরা! অবশেষে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায় মামলা হবার পর এলাকায় চলছে তোলপাড়।

বুধবার (১৫ জুলাই) উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে সালিশ সভায় মেয়েটিকে নানাভাবে মানসিক নিপীড়নমূলক কথাবার্তা বলেন সালিশকারকরা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএমএ মান্নান জাহাঙ্গীর, ইউপি সদস্য(মেম্বার) খোরশেদ আলম, বিল্লাল মিয়াসহ ২৬ জন সালিশকারক মিলে নির্যাতিতা ছাত্রীটিকে সাইফুল দেড়লাখ টাকা জরিমানা দেবে বলে রায় দেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে ওই ছাত্রী চেয়ারম্যান অফিসে সালিশ প্রত্যাখান করে থানায় মামলা করেন। পুুুলিশ মামলা রেকর্ড করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠায় এবং ধর্ষক সাইফুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। ধর্ষক সাইফুল ইসলাম উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের আজিজ মিয়ার পুত্র।
জানা যায়, স্কুল জীবন থেকেই সাইফুল এবং মেয়েটি সহপাঠী। দু’জনের বন্ধুত্ব ক্রমান্বয়ে প্রেমে গড়ায়। স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সাইফুল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।অন্যদিকে ধর্ষিতা ওই ছাত্রীটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা নানা-দাদার নাতনী হলেও তার পিতা-মাতা দরিদ্র হওয়ার সুবাদে সাইফুল ওই পরিবারে অবাধে যাতায়াত করতো। কৌশলে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে শারিরিক মেলামেশাও করতো। এমনকি বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রী ও তার মার কাছ থেকে টাকা পয়সাও নিয়েছে সাইফুল। গত ১১ ডিসেম্বর সাইফুল যখন ওই ছাত্রীকে নিয়ে আবাসিক হোটেলে গিয়ে রাত যাপনের প্রস্তাব করে তখনই  প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাইফুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আর তখন সাইফুল গা ঢাকা দেয়। এ নিয়ে ছাত্রীটি ও তার মা স্থানীয় চেয়ারম্যান- মেম্বারদের দ্বারস্থ হলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে তাড়িয়ে দেন। পরে নিরুপায় হয়ে গত ২ জুলাই ওই ছাত্রী কসবা থানায় সাইফুলকে আসামী করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে। মেয়েটির অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পান। দ্রুত মামলা রেকর্ড না করার সুবাদে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএমএ মান্নান জাহাঙ্গীর, ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, বিল্লাল মিয়াসহ ২৬ জন সালিশকার ১৫ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে সালিশ সভায় মেয়েটিকে নানাভাবে মানসিক নিপীড়নমূলক কথাবার্তা বলেন। ওই সালিশে কোনো মহিলা সদস্য উপস্থিত না থাকায় পুরুষ সালিশকারগণ মেয়েটিকে নানান অপমানমূলক কথাও বলে। এক পর্যায়ে ২৬ জন সালিশকারী জুরিবোর্ডে বসে সাইফুল ইসলাম নির্যাতিতা ছাত্রীটিকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা দেবেন বলে রায় ঘোষণা করেন। এতে ছাত্রীটি অপমানিত হয়ে তাৎক্ষণিক ওই এই বিচার প্রত্যাখান করে থানায় চলে যায়। পথে উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবনসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের ওই প্রহসনমূলক বিচারের কথা বললে সকলেই তাকে থানায় গিয়ে মামলা করান পরামর্শ দেন।
নির্যাতিতা ছাত্রীটি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে গত ৬/৭ মাস ধরে ধর্ণা দিয়ে প্রত্যাখাত হয়ে থানায় অভিযোগ দিই। কিন্তু আমাকে, আমার পরিবারকে চাপ দিয়ে সালিশে বসানো হয়। সাইফুল আমার সাথে যা করেছে এর সমাধান বিয়ে নয়তোবা তার শাস্তি। বিল্লাল মেম্বার আসামীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়েছেন, গরিবের বিচার নেই  বলে তাচ্ছিল্য করে নানা রকম অশালীন কথা বলেছেন। সালিশে আমাকে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে সুযোগ দেয়া হয়নি। কথা বলতে চাইলে গালমন্দ করা হয়।’ ধর্ষিতা ছাত্রীটির মা বলেন, ‘আমি গরীব বলে বিচারকরা আমার মেয়ের বিষয় বিবেচনা করেনি। সবাই ছিলো ছেলের পক্ষে।’
কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয় জীবন বলেন, ‘এটা আইনমন্ত্রীর এলাকা। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কোনোরকমের প্রহসনমূলক সালিশ করে নারী অধিকারকে খর্ব করতে দেয়া হবে না।’ তিনি ইউপি চেয়ারম্যান অফিসে মেয়েটির সাথে ওই সালিশকারীদের আপত্তিজনক কথাবার্তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ,’মামলা রেকর্ডের পর বুধবার রাতেই আমরা সাইফুলের বাড়িতে হানা দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।ডাক্তারী পরীক্ষা জন্য মেয়েটিকে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মেয়েটিকে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। কারণ সে বলছিলো, সাইফুল বিয়ে না করলে সে আত্মহত্যা করবে।’
শেয়ার করুন

Sorry, no post hare.