মোজাম্মেল চৌধুরী : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পারিবারিক বিরোধে এক ইটালি প্রবাসীর বিরুদ্ধে তার আপন ভাই-ভাতিজা ও ভাবীকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবিষয়ে শনিবার বিদ্যাকুট গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলন করেন হয়রানীর শিকার পরিবারের সদস্যরা। এতে ইউনিয়নের বিশিষ্ট লোকজনও যোগ দেন। তারা মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রবাসী তাজুল ইসলাম বহিরাগতদের বাদী করে নিজের ভাই,ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রামের মানুষ। গত ১৯শে জুলাই নবীনগর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রবাসী তাজুল ইসলামের একটি জায়গার লিজ গ্রহিতা মো: দুলাল মিয়া বাদী হয়ে তাজুলের বড় ভাই আবু শামীমের ৩ ছেলে কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক,সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন,মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন এবং তাদের মা লুৎফা বেগমকে আসামী করে একটি মামলা দেন। ওই মামলায় গাছ চুরি ও বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ আনা হয়। জেলা সদরের গোকর্ণঘাটের মো: গনি মিয়ার ছেলে আরশ মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ২০১৯ সালের ২৩শে আগষ্ট তাকে মারধোর ও পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক,তার দু-ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন ও মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন,চাচা আবু তাহেরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দেন। এরআগে প্রবাসী তাজুল ইসলাম নিজে গত বছরের ১৭ই জুন নবীনগর থানায় তার ভাই আবু তাহের,তাহেরের স্ত্রী আলেয়া বেগম, মেয়ে তানিয়া আক্তারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে জায়গাজমি দখল ও হত্যার হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেন।
তবে এসব অভিযোগ উদ্ভট বলে দাবী করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক,বিদ্যাকুট ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান,সুর স¤্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম,স্থানীয় সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন,মো: খোরশেদ আলম,মাহবুবুর রহমান,আতিকুর রহমান,কুদ্দুস মোল্লা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন,তৃতীয় ব্যাক্তিরা এসব ঘটনায় জড়িত। গাছ কেটে নেয়া বা জায়গা দখলের কথা আমরা শুনিনি। সুর স¤্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন,এটা জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ। আমরা এর সমাধান চাই। ইটালী প্রবাসী মো: খোরশেদ আলম বলেন,হয়রানীমূলক এসব মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে। একটা এতিম ছেলেকে মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। মানিকদের পরিবারের ওপর উল্টো অত্যাচার চলছে। তাদের এখান থেকে গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। এসব করে গ্রামের শান্তিপূর্ন পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন,মামলাগুলোর মধ্যে সত্যের কোন লেষ নেই। বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সদস্য জীবন মিয়া বলেন- যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। ডাক্তার গোলাম সারোয়ার বলেন-জায়গা-জমি দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। আবু তাহের বলেন, আমরা স্কুল পরিচালনা কমিটি থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি ২০ বছরের জন্যে। স্কুল পরিচালনা কমিটি,শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল আমাকে দোকান থেকে উচ্ছেদের জন্যে এসব করেছেন। তার কারনে আমি জেল খেটেছি। বাড়িতে ঝামেলাও তার কারনে। সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে ২০ বছরের চুক্তিতে তারা স্কুলের জায়গাটি নিয়েছেন। আবু তাহেরের সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই। তার ভাই তাজুল ইসলামই তাকে স্কুল থেকে উঠিয়ে দিতে আমাদের চাপ সৃষ্টি করেন। এতে রাজী না হওয়ায় ২০১৯ সালে আরশ মিয়া নামে একজনের কাছে জমি ভাড়া দিয়ে দেন তাজুল ইসলাম। পরে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের সাথে একটি চুক্তি করে এবং বলে দোকান থেকে তাহের মিয়াকে উঠানোর বিষয়ে আরশ মিয়া বুঝবে। সাবেক ইউপি সদস্য প্রবাসী তাজুল ইসলামের ভাবী লুৎফা বেগম বলেন,আমার ছেলেরা কেউ বাড়িতে থাকেনা। একবছর ধরে দুলাল,নূরুল ইসলাম,তপন ও আরশ আলী এসে আমাদের হুমকী দিচ্ছে। বলছে তাজুলের জায়গায় পা দিলে আমারে কিয়ামত করে ফেলবে। কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক ও তার ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন বলেন,তারা কর্মস্থলে নিজেদের কর্মে যখন নিয়োজিত, তখনই তাদের এসব মামলার আসামী করা হয়। অথচ আমরা এসব বিষয়ে কোন কিছুই জানিনা। তবে বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: এনামুল হক বলেন,এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। তিনি এটি মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। সরজমিনে সাংবাদিকরা জায়গা দখল বা গাছ কাটার কোন প্রমান পাননি। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
শেয়ার করুন