খবর সারাদিন রিপোর্ট : ঠান্ডা মাথায়। খুবই পরিকল্পিত ভাবে স্কুল পড়ু–য়া দু, শিক্ষার্থীকে জবাইয়ের পর হত্যা করা হয়েছে। নেপথ্যে অর্থের লেনদেন বলে স্থানীয়দের মত। তবে পুলিশ নিশ্চিত করেছে, পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের কথা। সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সলিমাবাদ গ্রামে প্রবাসী কামাল মিয়ার বাড়ির খাটের নীচ থেকে তার দু, সন্তানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিপা আক্তার (১৪) বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও কামরুল সলিমাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কেন, কি ভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছে না পুলিশ। তবে পুলিশ হত্যার ক্লু বের করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সূত্র গুলো বলছে, দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটিতে প্রবাস ফেরত কামাল তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্র ছাড়া কেউ থাকত না। কামাল গত ১০ ফেব্রুয়ারী দেশে আসে। বেশ কিছু দিন ধরে কামালের শ্যালক বাদল মিয়া এ বাড়িতে অবস্থান করছিল। বাদলের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খাদেরপুর গ্রামে। একটি মারামারির মামলায় আসামী হওয়ায় বোনের বাড়িতে সে আত্মগোপনে ছিল। বাদল মিয়া তার বোনদের কাছ থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১৪/১৫ লাখ টাকা ধার নেয়। এরপর কিছুদিন বিদেশ থাকে। বিদেশে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করবে এমন আশ্বাস দিয়েই টাকা কর্য নেয়। সম্প্রতী লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে চলে আসার পর তার বোনেরা জানতে চাইলে সে জানায় আবার বিদেশ চলে যাবে। সেখানে ঝামেলা হয়েছে তাই দেশে এসে পড়েছে। পরবর্তীতে ধার-দেনা মিটিয়ে দেবে। তার নিকট আত্মীয় মোঃ আসিফ এ তথ্য জানায়। তিনি মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্ত করতে আসার পর স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের জানান, সোমবার কামাল মিয়াকে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল বাদলের। এদিন রাতেই কামাল মিয়ার দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটলো। সে দিন বাদলও এ বাড়িতে অবস্থান করছিল। ওই বাড়ির দুটি কক্ষের খাটের নীচে নিহতদের মরদেহ পাওয়া যায়। তাদের হাত-পা বাঁধা ছিল। সূত্র বলছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় জবাই করা হয়। হত্যা নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হয়েছে। আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের বেশ কিছু চিহ্ন। ঘটনার পর থেকে মামা বাদল পলাতক রয়েছে। শিশু কামরুল হাসানের মরদেহ যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে কক্ষেই অবস্থান করত তার মামা বাদল। সন্ধ্যার পর উচ্চস্বরে ডেক্সসেট বাজানোর শব্দ শুনেছে প্রতিবেশীরা। জোড়া খুনের ঘটনায় কতজন অংশ নিয়েছে তা পুলিশ নিশ্চিত হতে পারে নি। পেশাদার খুনিদের সহায়তায় হত্যাকান্ড সংঘঠিত হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছে। পুলিশ জানিয়েছে যেহেতু এই বাড়িতে মামা এবং শিশুদের পরিবারের সদস্যরা থাকত তারাই জানতে পারে ঘটনার মূল রহস্য। ঘরের লোকজনই এ হত্যায় জড়িত। এ পর্যন্ত ৩/৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যার মোটিভ সমন্ধে ওয়াকেবাহল হয়েছে। বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে মামা বাদল মিয়া পলাতক রয়েছে। তাকে আটক করা গেলেই হত্যার প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। পুলিশের ৩টি টিম সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২ স্কুলশিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। থানায় মামলাও হয় নি। জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অনিহা প্রকাশ করেছে। নিহতদের পিতা-মাতা এখন থানায় রয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান বলেছেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর রহস্য উদঘাটন করা হবে। দুপুরে নিহতদের ময়না তদন্ত জেলা সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।
শেয়ার করুন