কাউছার আলম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : “বিপদে প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়” একথাটি অনেক সময় অামরা কথার ছলে উদাহরনসরুপ বলে থাকলেও, এবার কথাটির বাস্তবে রুপ দিয়েছে ক্যান্সারে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র আশিককে বাঁচাতে তার বন্ধু’মহল। আশিকের জন্য দৃষ্টান্তমূলকভাবে সহযোগীতায় হাত বাড়িয়ে সত্যিকার অর্থে তারাই প্রমাণ করেছে “বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়”।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মেধাবী শিক্ষার্থী আশিক রানা। উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ুইবাড়ি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আনিছুর রহমানের ছেলে আশিক। লাউর ফতেহপুর ব্যারিষ্টার জাকির আহম্মদ কলেজ থেকে এবার HSC পরিক্ষায় অংশগগ্রহন করার কথা তার, অভাবের সংসারে ছেলেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়ে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে আশিকের পরিবার।
পরিবারের স্বপ্ন ছিলো একদিন তার আদরের সন্তান উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে, পরিবারের মুখে হাসি ফুটাবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারবে। সেই পথে অনির্বাণ হয়েই তো চলছিলো আশিক।
আজ এই ক্রমাগত জ্বলে উঠা প্রদীপ যেন আলো আঁধারের মাঝে নিভু নিভু অবস্থা। মেধাবী ছাত্র আশিক আজ মরনব্যাধী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।
আশিকের ব্যায়বহুল চিকিৎসায় পরিবারের তেমন সামর্থ্য না থাকায়, তার পরিবার যখন হতাশায় পড়ে গেছেন ঠিক এমন মুহুর্তে আশিকের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার সহপাঠী বন্ধুরা। আশিকের চিকিৎসার জন্য তার বন্ধুরা মিলে নিজেদের ব্যাক্তিগত অার্থিক সহযোগীতা সহ উপজেলার বিভিন্ন সংগঠন ও হাট/বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের বন্ধুদের বাচঁতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন।
শনিবার ঢাকার মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গভেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তাদের সংগ্রহ করা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আশিকের বাবার কাছে বুঝিয়ে দেন। এসময় আশিকের বন্ধুদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হাসিবুর রহমান সিয়াম, জ্বিলানী, মুস্তাকিম, সাইফুদ্দিন, সোহাগ, পারভেজ, আরিফ, রনি, রাশেদ, আকিব ও শরিফুল ইসলাম। তারা আশিকের খোজঁখবর নেন এবং তাকে সান্তনা দেন।
এসময় আশিকের বন্ধুরা জানান- আমাদের সকল বন্ধুদের প্রচেস্টায় আশিকের বাবার হাতে আমরা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি এবং আশিক কে বাচঁতে আরো অর্থ জোগাড় করার চেষ্টা আমাদের অব্যাহত আছে। তবে আশিকের চিকিৎসা ব্যায়বহুল হওয়াতে সমাজের উদার মনের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন আশিকের বন্ধুরা।
বন্ধুদের সহযোগীতায় আশিকের চিকিৎসার জন্য টাকা পেয়ে দরিদ্র পিতা আনিছুর রহমান বলেন, আমার ছেলেকে বাঁচাতে, তার বন্ধুরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো, তা সত্যিই বিরল। আমি তাদের মাধ্যমে আশিকের চিকিৎসার জন্য আড়াই লক্ষ টাকা সহযোগীতা পেলাম। এভাবে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো আমার ছেলেকে চিকিৎসার মাধ্যমে বাচাঁতে পারবো।
আশিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিদ্যাপীঠ লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ জানান- আশিক আমাদের কলেজের একজন মেধাবী ছাত্র, তার এমন অসুস্থ্যতায় আমাদের কলেজ পরিবার ভারাক্রান্ত। খবর পেয়েই আমি হাসপাতালে গিয়ে আশিকের খোজঁখবর নেই। আশিকের জন্য তার বন্ধুরা যে সহযোগীতা করলো, তা বর্তমান সময়ে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আশিকের জন্য কলেজ পরিবারের পক্ষ সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে এবং সকলের কাছে তার দোয়া কামনা করেন তিনি।