,
শিরোনাম:
১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় উদ্বোধন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা নাসিরনগর সরকারি কলেজে ছাত্রদলের মতবিনিময় ও লিফলেট বিতরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংর্ঘষ, আহত অর্ধশত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা বানিজ্য \ কাজ হচ্ছেনা পুলিশের সর্তক বিজ্ঞপ্তিতে \ জনমনে আতঙ্ক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু শিবির ও শীত বস্ত্র বিতরন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন মাদক পাচারকারী গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মা সহ ২ কন্যা সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ মাসে অর্ধশতাধিক খুন 

Brahmanbaria murder pic 1 1
মোজাম্মেল চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার এবং একাধিক সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনো নিজ বাড়ির খাটের নীচ থেকে জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আবার কখনো প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে দলবেঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যাসহ বিভিন্ন কায়দায় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। কোন কোন সময় সড়ক মহাসড়ক ও জলাশয়ে মিলছে মরদেহ। চলতি বছররে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্ধশত হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এসকল হত্যাকান্ডের ঘটনায় পৃথক পৃথক ভাবে মামলা হলেও অনেক আসামী এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ভূক্তভোগী পরিবার গুলোর দাবী মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। প্রকৃত আসামীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের গড়িমসি এবং খুনের মত ঘৃন্য ঘটনায় সমাজপতিদের হস্তক্ষেপে আপষের মত অপসংস্কৃতির কারণেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। তাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা।
অনুসন্ধানে জানাযায়, আলোচিত এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর লামা বায়েক গ্রামের জোড়া খুন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাওনা টাকা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয় ইশান ও মনির নামের দুই যুবক। গেল  দেড় মাসে মাসে এই হত্যা মামলায় মাত্র ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামীরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিহত ইশানের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ মা আকলিমা আক্তার ও বাবা মিজানুর রহমান। তারা কিছুতেই তাদের সন্তানের এই নির্মম হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছেন না। পুত্র শোকে কাতর হয়ে বার বার মূর্ছা যান নিহত ইশানের মা আকলিমা আক্তার। এ সময় তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, ছেলেই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। অনেক শ্রম অনেক প্রচেষ্টা দিয়ে তাকে লালন পালন করেছি। আমার ছেলেকে যারা মেরে ফেলেছে তারা এখনো মুক্ত আকাশের নীচে ঘোরা ফেরা করছে আর আমরা কষ্টে দিন পার করছি। আসামীদের হুমকী ধামকীতে আমার এখন আতংকে রয়েছি।
নিহত ইশানের বাবা মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকান্ডের এতদিন পার হলেও আসামীদের ধরা হচ্ছে না। আসামীরা প্রতিনিয়ত হুমকী ধামকী দিচ্ছে। কখন কি ঘটে তা বলতে পারি না। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, সরাইলসহ জেলার ৯টি উপজেলাতেই এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২টি জোড়া খুন, ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টায় খুন সহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেওয়ারিশ মরদেহও উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এতে অন্তত শতাধিক জনকে আসামী করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সকল মামলার সাথে জড়িত অনেক হোতাকে আইনের আওতায় আনলেও মামলার অধিকাংশ আসামীরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
অপরাধের ঘটনায় প্রকৃত আসামীদের আইনের আওতায় আনতে ও তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের গড়িমশির কথা উল্লেখ করে জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য আবদুন নূর বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সামাজিক অস্থিরতাসহ খুন খারাবি বাড়ছে। যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। এতে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তিনি, একা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দায় না চাপিয়ে সমাজে অপরাধ বন্ধ করতে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজপতিসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান।
জেলার প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, একটি খুনেরও সঠিক বিচার হয় না। কোন খুনের ঘটনা বিচারের প্রক্রিয়ায় গেলেই এক শ্রেণীর সমাজপতিরা বা গোষ্ঠীর নেতারা শান্তি রক্ষার নামে হত্যার মত ঘৃণ্য ঘটনার আপোস করার অপসংস্কৃতির কারণে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, কোন খুনের আপোস নয়, বরং খুনের সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শফিউল আলম লিটন বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপড়তা আরো গতিশীল করতে হবে। কারণ একটা অপরাধ সংঘটিত হবার সাথে সাথে তা দমন করা গেলে কেউ অপর একটি অপরাধ করতে সাহস পাবে না। আপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলেই অপরাধীরা অপরাধ থেকে দূরে থাকবে।
পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটি হত্যাকন্ডের ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। হত্যাকান্ডগুলো পারিবারিক কলহ, দলীয় কিংবা গোষ্ঠীগত দ্বন্দের কারণে ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহনসহ হত্যাকান্ডের বেশীর ভাগ রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় এনেছে। এছাড়াও সামাজিক অপরাধ রোধে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে।
শেয়ার করুন

Sorry, no post hare.