খবর সারাদিন রিপোর্ট : মহামারী করোনা চলছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সরকারী নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতাও প্রদান করা হয়নি। শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করেছে ঠিকই। করোনার সময় বাড়ি থেকে ডেকে এনে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তারপর ও কোন প্রকার নোটিশ ও বকেয়াও বেতন ভাতা পরিশোধ ছাড়াই ১৪ শিক্ষক-শিক্ষিককে ছাটাই করা হয়েছে। এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সর্বত্র বিতর্কের ঝড় বইছে। ভূক্তভোগী শিক্ষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেকটাই হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে গত রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন ওই শিক্ষকরা। করোনার মধ্যে সরকার যেখানে শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ করে যাচ্ছে এমন অবস্থায় তাদের ছাটাই ঘটনা অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
শিক্ষকদের লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৩ ১৫ সাল থেকে খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করে আসছেন নাসরিন আক্তার, সজিব মিয়া, আকবর হোসেন, মোঃ এনামুল হক, জিল্লুর রহমান, রবিউল আউয়াল এমরান হোসেন, দুলাল চন্দ্রসাহা, আতিকুল ইসলাম, লক্ষী রাণী ভট্রাচার্য্য, রিনা রাণী ভট্রাচার্য্য, খলিলুর রহমান, সামিনা আক্তার ও উম্মে হানি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুনির্দিষ্ট কোন কারন ছাড়াই স্কুল কর্তৃপক্ষ আবারো খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্থানীয় দুটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিষয়টি জানতে পেরে ভূক্তভোগী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিল্লাল মিয়া চৌধুরীর কাছে গেলে তারা জানতে পারেন যে সকল খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষকদের চাকুরী থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে বিনা নোটিশে গোপনে চাকুরী থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ভূক্তভোগী শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলতে বলেন। পরে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের সভাপতি সফিকুর রহমানের কাছে চাকুরী থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে কথা বললে তিনি ওই শিক্ষকদের চাকুরী করতে চাইলে আবারো আবেদন করতে বলেন। পরে শিক্ষকরা ২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি ওই ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং বেতন-ভাতা দিবেন না বলে জানিয়ে দেন। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূক্তভোগী ওই শিক্ষকরা করোনাকালীন সময়েও প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে বিগত জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ রেজাল্টও এসেছে। কিন্তু কোন কিছু না জানিয়ে গোপনে একযোগে সকল খন্ডকালীন সহকারি শিক্ষকদের বাদ দেয়ার কারণে ওই শিক্ষকরা পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। একজন শিক্ষিকা জানান, অন্যয় ভাবে তাদের ছাটাই করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল মিয়া চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের ফান্ড কম থাকার কারণে কমিটির সিদ্ধাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কমিটি বেতন দিতে পারে না, স্কুলের ফান্ড শুণ্য। তবে নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, যেই শিক্ষকরা চাকুরীতে ছিলেন তারা চাইলে আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনে তাদের মধ্য থেকেই কমিয়ে শিক্ষক নেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি সফিকুর রহমানের সাথে যোগযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনি সামনে এসে কথা বলেন। আপানাকে স্বাগতম। সামনে এসে কথা বললে সুবিধা হবে।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক বলেন, এসিল্যান্ডকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টির তদন্ত করছে।