খবর সারাদিন রিপোর্ট : করোনাভাইরাস মহামারী কবলিত বাংলাদেশের দুর্যোগময় মুহূর্তে পুলিশের আমূল পরিবর্তন গোটা দেশবাসীকে আলোড়িত করে তুলেছে। তাদের সাম্প্রতিক আচরণ, মানবিকতা, ব্যক্তি ও সামাজিক কল্যাণের নানা কর্মকান্ড দৃষ্টি কেড়েছে দেশবাসীর। স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই পুলিশকে জনগণের বন্ধু বানানোর ঘোষণা দিয়েছে- নানা প্রকল্প, কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চেষ্টাও চালিয়েছে। পুলিশ সংস্কারের নামে বিস্তর টাকা খরচ করেও কিছু হয়নি। বদলানো যায়নি পুলিশকে- জনগণের সঙ্গে দূরত্বও ঘোচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু করোনাভাইরাসকে ঘিরে জাতির এই মহাদুর্যোগে সেই পুলিশ কোনোরকম প্রকল্প ছাড়া নিজে নিজেই আমূল বদলে যাচ্ছে, গড়ে তুলছে আলাদা ভাবমূর্তি। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, নজিরবিহীন সব উদ্যোগ নিয়ে পুলিশের মর্যাদাকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছেন মানুষের পাশে অন্যরকম পুলিশ।
সাম্প্রতিক সময়ে অসুস্থ নারী-পুরুষ-শিশুদের পুলিশের গাড়িতে তুলে ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে পৌঁছানো থেকে শুরু করে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বরিশাল রেঞ্জের পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। আর নিজেদের খাবার অসহায় অনাহারী মানুষের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার হৃদয় নিংড়ানো মানবতা যেন পুলিশের নিত্যকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের তৃণমূল পর্যায়ের ইউনিট সদস্যরাও ‘দিনে অন্তত একটি ভালো কাজের’ দৃষ্টান্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান বরিশাল রেঞ্জে যোগদান করার পর ও বরগুনা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক এদের মতো কিছু পুলিশ কর্মকর্তাদের করা দৃষ্টান্তমূলক কর্মকান্ডে পাল্টে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের চিরাচরিত ধ্যান-ধারণা। তারা জীবন বাজি রেখে নেমে পড়েন মানবতার সেবায় এই মহামারী দুর্যোগ করোনাভাইরাস এ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, সর্বাত্বক লকডাউনে তাদের জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন এবং মানুষকে করছেন সচেতনতা। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাক্স হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। এতে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন, ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক সর্বত্রই প্রশংসিত হন।
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে পোস্টে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন, নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাহায্য প্রয়োজন তাদের সাহায্যের জন্য মোবাইল নম্বরসহ ইনবক্স করতে বলা হয়। জানানো হয় পরিচয় গোপন রেখে তাদের সাহায্য করা হবে। এরপরই প্রচুর সাড়া মেলে। সেই মতো জুন-জুলাই থেকে কর্মহীন, অসহায়, দুস্থ, নিম্ন মধ্যবিত্ত/মধ্যবিত্তদের বাসায় তাদের পরিচয় প্রকাশ না করেই প্রতিদিন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির দিকনির্দেশনা ফলো করে, বরগুনা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সবাই নিম্নবিত্ত, গরিব দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনা করে সাহায্য সহযোগিতা করছি। তবে সমাজের অনেকেই নীরবে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তারা কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। তাদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।’ ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মহান মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা,প্রতিটি থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এই মহামারিতে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে হবে।