,
শিরোনাম:
১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় উদ্বোধন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা নাসিরনগর সরকারি কলেজে ছাত্রদলের মতবিনিময় ও লিফলেট বিতরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংর্ঘষ, আহত অর্ধশত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা বানিজ্য \ কাজ হচ্ছেনা পুলিশের সর্তক বিজ্ঞপ্তিতে \ জনমনে আতঙ্ক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু শিবির ও শীত বস্ত্র বিতরন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন মাদক পাচারকারী গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মা সহ ২ কন্যা সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকা ডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২   তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

FB IMG 1630088917525
খবর সারাদিন রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবোঝাই নৌকার সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় নৌকাডুবির ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমীন, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এর আগে শুক্রবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান। তিনি বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক জানান, মুমূর্ষু অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যাঁরা নিহত হয়েছেন
নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকূট গ্রামের আব্দুল্লাহ মেয়ে তাকওয়া (৮), চম্পকনগর গ্রামের জহিরুল হক ভ’ইয়ার ছেলে মামুন ভূইয়া (২০), গেরারগাঁও গ্রামের মৃত কালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের জজ মিয়ার মেয়ে মুন্নি (০৬), গেরারাগাঁর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম, নুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী মিনারা বেগম, আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জলী বিশ্বাস (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পৈরতলা গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), একই উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের ফুয়াদ হোসেরন ছেলে তানভীর (০৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (০৭), ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), উত্তর পৈরতলা গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলী বেগম, পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মীম (১২), ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম (৫৫), আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (০২), মনিপুর গ্রামের হাজী আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), বাদেহারিয়া গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে মাইদা আক্তার (০৬), ময়মনসিংহ জেলার গোপালপুর গ্রামের শাওনের মেয়ে সাজিদ (০৩), বড় পুকুরপাড়ের মোঃ সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার, সোনাবর্ষিপাড়ার আব্দুল বারী ভূইয়া স্ত্রী মোসাঃ নুসরাত জাহান, উত্তর পৈরতলা গ্রামের হারিজ মিয়ার মেয়ে নাফসা আক্তার (০৩)।
মরদেহ শনাক্তের পর হস্তান্তর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবোঝাই নৌকার সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২২জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে গত শুক্রবার রাতেই ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তের পর হস্তান্তর করা শুরু হয়েছে স্বজনদের কাছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন জানান, কিছু মরদেহ ঘটনাস্থলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালেও বাকি মরদেহ নিয়ে আসা হয়। তাদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করার পর হস্তান্তর করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ২০টি লাশ এবং ঘটনাস্থলে ০২টি লাশ স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে লইসকা বিলে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় মামলাটি করেন। মামলা নং-৪৪। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলেন-বালুবাহী ট্রলারের মাঝি জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ি এলাকার জমির মিয়া (৩৩), মো. রাসেল (২২), খোকন মিয়া (২২), মো. সোলায়মান (৬৪) ও বিজয়নগর পত্তন ইউনিয়নের কালারটেক গ্রামের মিস্টু মিয়া (৬৭)। বাকি দুজনের নাম জানায়নি পুলিশ।
মামলার বাদী সেলিম মিয়া (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরারাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় তার চারজন স্বজন মারা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো ২ জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া ২টি বাল্কহেড(ইঞ্জিনচালিত বালুর নৌকা) আটক করা হয়েছে।
নৌকা চলাচল সাময়িক বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের লইসকা বিলে নৌকাডুবির ঘটনার পর নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিলের পাড়ে স্বজনদের ভীড়ও কমে গেছে। এদিকে শুক্রবার রাত নাগাদ উদ্ধার হওয়া ২১ জনের লাশ শুক্রবার রাতের মধ্যেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল শনিবারে উদ্ধার হওয়া শিশুটি লাশ সকালে হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে।  এ সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গনে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শত শত মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়। দুর্ঘটনার কারণে ওই নৌপথে সাময়িকভাবে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মনিপুর এলাকায় বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় প্রায় ১০০ যাত্রী নিয়ে চলা নৌকা ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনার সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া ওই শিশুসহ মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ২২ এ। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
তীরের কাছে এসে ডুবে গেল তরী
ট্রলারটিতে সর্বশেষ যাত্রী উঠেছিল মনিপুর ঘাট থেকে। আর মাত্র ১০-১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই ট্রলারটি পৌঁছে যেত আনন্দবাজার ঘাটে। এটিই ছিল দিনের শেষ খেয়া। কিন্তু তীরের কাছাকাছি এসেও ডুবে গেল তরী। বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যায় শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবে মৃত্যু হয় ২২জনের। এছাড়া নিখোঁজ হন অর্ধশত যাত্রী। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে ঘটে। যাত্রীবাহি ট্রলারটি বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে জেলা শহরের আনন্দবাজার ঘাটের দিকে আসছিল।
ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী আলী আক্তার রেজভী জানান, ট্রলারটি লইসকা বিল আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই পানিতে তলিয়ে যান।
লইসকা বিলে নিখোঁজ বড়ভাইয়ের জন্য আহাজারি করা এনামুল ইসলাম জানান, তার ভাই সিরাজুল ইসলাম মনিপুর ঘাট থেকে ট্রলারটিতে ওঠেন আনন্দবাজারে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুদূর যাওয়া  পরই ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে তার ভাই নিখোঁজ হন। বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম জানান, নববধু শারমিন আক্তারকে নিয়ে ট্রলারে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় তিনি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও স্ত্রীকে টেনে তুলতে পারেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন জানান, নিহতদের প্রত্যেকের দাফনের জন্য পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

 

শেয়ার করুন

Sorry, no post hare.