মার্চ মাস বাংলা ভাষা আন্দোলনের মাস। তারপরের মাস শুরু মুসলমানদের রোজার মাস। এ মাসে অজু অবস্থায় থাকা হয় বেশি। সাথে নামাজ পড়া, কুরআন তেলওয়াত তো আছেই। কুরআন তেলওয়াতের সময় অনেকে চশমা ব্যবহার করে থাকেন।
দিন শেষে ইফতারের সময় নানা আইটেমের সাথে থাকে আনারস, পেঁপে পেয়ারার মতো ফল বা এগুলোর জুস। ইফতার শেষে অনেকের চা পান পানের অভ্যাস থাকে । যাইহোক, রোজা শেষ হলে ঈদ আসে। ঈদে সেমাই রান্না হয় ঘরে ঘরে । আর এর প্রস্তুতি নিতে হয় আগে থেকেই। চাহিদা অনুযায়ী ঈদের কেনাকাটার জন্য সন্তানদের টাকা দেন বাবারা। কেনাকাটার জন্য যেতে হয় মার্কেটে। আর যদি এ সময় গুলোতে থাকে হরতাল বা লগডাউন তাহলে পেরেশানের শেষ নেই। যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতে হয় রিক্সা। শপিং শেষে ক্লান্ত হয়ে অনেকে ডগডগ করে পানি পান করা শুরু করে দেয়। সে যে রোজা খেয়ালি থাকে না।
আমি এখানে এতক্ষণ গল্পের মতো করে কিছু লিখলাম, এখানে কয়টা শব্দ বাংলায় আছে তা বলার জন্য। দেখে তো মনে হচ্ছে পুরো কথা গুলো আমি বাংলা শব্দেই লিখেছি। আসলে কি তাই? এখানে মার্চ মাস হচ্ছে ইংরেজি বারো মাসগুলোর একটি মাসের নাম। আইটেম, শপিং, মার্কেট এ শব্দ গুলো ইংরেজি। নামাজ, রোজা ফারসি শব্দ। অজু, কুরআন আবার আরবি শব্দ। আনারস, পেঁপে, পেয়ারা এ ফলগুলো পুর্তগীজ ভাষার। এদিকে চা হচ্ছে চীনা শব্দ। আবার চাহিদা শব্দটি পাঞ্জাবি, বাবা তুর্কি। অন্য দিকে রিক্সা জাপানি, হরতাল গুজরাটি। দাম আর সেমাই শব্দটা গ্রিক। জীবন বাঁচার মূল্যবান উপাদান পানি শব্দটি হিন্দি। বাংলা একাডেমি বাংলা অনুসরণ করে এবং করাই। অথচ একাডেমি শব্দটা ইংরেজি।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে ভাষার মাস উপলক্ষে নানা ব্লগ তৈরি করে, ইউটিউবে নানা ভিডিও আপলোড দেয়, অন্তত ভাষার মাসে যেন ইংরেজি থেকে দূরে থাকি এসব নিয়ে বিজ্ঞাপন হয়। বাংলা ভাষা নিয়ে সচেতনতায় কত কি? আসলে কি সবটা বাংলা বলা আদৌ সম্ভব! আমরা ঠিক কতটা বাংলায় আছি! আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষাগুলো বাংলার মতো করে ব্যবহার করছি বা আমরা ধরেই নিয়েছি এগুলো বাংলা সেগুলো ছাড়া চলা আদৌ সম্ভব নয়। আমাদের বাংলায় যেমন অন্য ভাষার দখল আছে তেমনি অন্য জাতির ভাষায়ও বাংলার একটা অবস্থান রয়েছে। তবে খেয়াল করলে দেখা যাই আমরা শুধু ইংরেজির দিকে নজর রাখি। বাংলার ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজি বলা নিয়ে বেশি হাসি ঠাট্টা করি। অথচ অন্য ভাষারও মিশ্রণ কিন্তু কম নয়। তাই আমাদের সচেতন হওয়া উচিত ভাষা যেটাই হোক না কেন,তা যেন অপভাষা না হয়। সর্তক থাকতে হবে এমন ভাষা ব্যবহার থেকে যে ভাষা মানুষকে কষ্ট দেয়, যে ভাষা শুনে মানুষ আহত হয়। তাহলেই ভাষার আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। ভাষা যেন হয় কদাকারহীন স্বচ্ছ।
শেয়ার করুন