খবর সারাদিন রিপোর্টঃ মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়িতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত তিন বাংলাদেশীর মধ্যে একজনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে।
তার নাম মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন -(৩০)। তিনি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরু মিয়ার ছেলে।
গত মঙ্গলবার ভোর রাত ৩টায় সেখানে এই বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটে। নিহত জসিম উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন বেগম ও দুই শিশু পুত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে মোহাম্মদ একরাম হোসেনের বয়স ছয় বছর। ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের বয়স চার বছর।
জসিমের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তার গ্রামের বাড়িতে এখন শুধু শোকের মাতম। তার মৃত্যুকে কোনভাবে মানতে পারছেনা পরিবারের সদস্যরা। স্বামীর মৃত্যুর শোকে পাথর হয়ে গেছেন স্ত্রী শারমীন। তিনি বার বার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছেন। লুটিয়ে পড়ছেন স্বজনদের বুকে।
শুধু স্ত্রী শারমীনই নয়, জসিমকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় তার বড় ভাই জুলহাস উদ্দিন। বৃদ্ধ বাবা মুক্তিযোদ্ধা নূরু মিয়াও হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। ভাইয়ের শোকে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছেন জুলহাস। পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে খাটিঙ্গা গ্রামে।
নিহত জসিমের বড় ভাই মোঃ জুলহাস উদ্দিন বলেন, সিলেটের ৬১ ই বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মোবাইল ফোনে তাদেরকে জসিমের মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে জসিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেয়। ৯ মাস আগে যে শান্তিরক্ষী মিশনে আফ্রিকায় যায়। তিনি তার ভাইয়ের লাশ দ্রæত দেশে আনার ব্যবস্থা ও জসিমের স্ত্রী ও সন্তানদের দায়িত্ব নেয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানান।
জসিমের ভাবি জাহানারা বেগম বলেন, মিশনে থাকলেও জসিমের মনটা পড়ে থাকতো গ্রামের বাড়িতে। সব সময় চিন্তা করতেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতেও তার সাথে (জাহানারা) শেষ কথা হয় জসিমের। সে সময়ও জসিম বলেন, আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে দেখে রেখো। তোমরা ছাড়া তাদের আর কেউ নেই। তিনি বলেন, জসিমের স্বপ্ন ছিলো ছেলে দুটোকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ জসিম শুধুই আমাদের কাছে স্মৃতি।
জসিম উদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরু মিয়া বলেন, আমিও দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার ছেলেও দেশের জন্য দেশের বাইরে গিয়ে জীবন দিয়েছে। তিনি তার ছেলের লাশ দ্রæত দেশে আনার ব্যবস্থা ও তার পরিবারের পাশে থাকার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জসিম উদ্দিন খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত। পুরো গ্রামের এখন শোকের ছায়া।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, পূজার দায়িত্ব থাকার কারনে আমি জসিমের বাড়িতে যেতে পারিনি। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে জসিমের বাড়িতে পাঠিয়েছি খবরাখবর নেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার আমি নিজেও জসিম উদ্দিনের বাড়িতে যাবো। তিনি বলেন, জসিমের লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি তার পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।