খবর সারাদিন রিপোর্টঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ইউনিয়ন পরিষদের ১২জন সদস্যের (মেম্বার) দায়েরকৃত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
কড়া পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মঙ্গলবার দিনব্যাপী চলে এই তদন্ত কার্যক্রম। তদন্ত কমিটির কাছে ইউপি সদস্যসহ শতাধিক লোক স্বাক্ষী দেয়।
তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে পরিষদের বাইরে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ অবস্থান করছিলো।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ সুমন মিয়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলে ইউনিয়ন পরিষদের ৩ জন মহিলাসহ মোট ১২ জন সদস্য তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষ্য দেয়। পরে তাদের সাথে আসা ভুক্তভোগিদের স্বাক্ষ্য ও গ্রহন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেডলাইসেন্স, মৃত্যুর সনদ প্রদানে ও সরকারি নলকূপ বসানোর কাজে ইচ্ছেমত অতিরিক্ত টাকা আদায়।
পরিষদের সদস্য ও সুবিধাভোগিদের সাথে খারাপ আচরণ ও কোন বিষয়ে পাত্তা না দেয়া। ভুয়া প্রকল্প বা একই প্রকল্প একাধিকবার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা।
স্বাক্ষী দিতে আসা ভূঁইশ্বর গ্রামের রাশিদ মিয়া বলেন, উদ্যোক্তা মিঠু চেয়ারম্যানের স্বজন। ৩টি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমার কাছ থেকে ২৪০০ টাকা নিয়েছে।
একই গ্রামের রেজিয়া বলেন, নাতির জন্মনিবন্ধনের জন্য আমাকে ১৪০০ টাকা গুণতে হয়েছে। পাকশিমুল গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, ১টি ওয়ারিশ নামা নিতে চেয়ারম্যানের হাতে আমাকে নগদ ২৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা ছাড়া কোন কাজ করেনা চেয়ারম্যান।
কালিশিমুল গ্রামের শাহ পরাণ বলেন, দুই মাস আগে ১টি ট্রেডলাইসেন্সের জন্য এসেছিলাম। চেয়ারম্যান ২৬০০ টাকা চেয়েছেন। তাই এখনো নেইনি।
ইউপি সদস্য মলাই মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান শুধু অনিয়ম আর দুর্নীতি টাকা রোজগার করেছেন। সাধারণ জনগণকে পরিষদে আসতে নিষেধ করেন। আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। সবকিছু থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ টাকা আদায় করছেন। মানুষকে হয়রানি করছেন। এভাবে একটি পরিষদ চলতে পারে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ সকল অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। আমি চোখে না দেখে জন্ম নিবন্ধনসহ কোন সনদ দেইনা। কারণ জালজালিয়াতি হলে পরে দায়িত্ব নিবে কে? তারা শুরু থেকেই লুটপাটের চেষ্টা করছেন। আমি সেই সুযোগ দিচ্ছি না। কারণ আমি ইউনিয়নবাসীর কাছে স্বচ্ছ কাজ ও সেবা দেয়ার অঙ্গিকার করে এসেছি। আর এ জন্যই আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সুমন মিয়া বলেন, সকল অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগির সাথে কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য নোট করেছি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রমাণ চেয়েছি। এই অভিযোগের উপর স্বচ্ছ সুন্দর একটি প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেয়ার চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরূদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।