খবর সারাদিন রিপোর্টঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ডাকাত আতঙ্কে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিং শোনার পর এলাকার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় পাহারা দেয়। পাশাপাশি জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পুলিশের টহলের সংখ্যা বাড়ায়। তবে রাতে কোন ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার রাত ১২টার দিকে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা
মসজিদের মাইকে ”পুলিশ বলছে ডাকাত আসতে পারে” বলে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। এ সংবাদ দ্রæতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তে গোটা উপজেলায় ভাইরাল হয় ডাকাত আতঙ্ক ।
খোঁজ নিয়ে ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মোঃ মোখলেছুর রহমান এলাকার মসজিদে মাইকে ঘোষনা করেন, “পুলিশ বলছে এলাকায় ডাকাত পড়েছে” সবাই ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসুন, ডাকাত পড়েছে এলাকায়।
মসজিদের মাইকে এই খবর প্রচার হওয়ার পর মুহুর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায়। মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু সকালে বিভিন্ন ইউনিয়নে খবর নিয়ে জানা যায় কোথাও কোন ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ‘ডাকাত আসছে’ খবরটি মসজিদের মাইকে শোনার পর অনেকেই এটা বিশ্বাস করে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে সারারাত সজাগ থাকতে বলেন। তার পরই একযোগে সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিতে থাকেন।
খবর পেয়ে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় টহল দেয়। পাশাপাশি গ্রাম পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফোন করে জানায়, নাসিরনগর ডাকাত আসছে। যে কোন সময় যে কোন গ্রামে প্রবেশ করে ডাকাতি করতে পারে, তাই আপনারা সর্তক থাকুন এবং গ্রামের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয়দের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করুন। আমরা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কাজ করেছি।
উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের মোঃ আব্দুল হাকিম তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন ‘২৩ জনের একটি ভয়ংকর ডাকাত গ্যাং নাসিরনগর প্রবেশ করেছে, সবাই সাবধান।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রাতের বেলা ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে ডাকাতের বিষয়ে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান, পরে আমরা জনগনকে নিয়ে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পাহারা দিয়েছি। তবে উপজেলায় কোন ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে নাসিরনগর উপজেলার মানুষকে সর্তক করতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ফোন করে বলা হয়েছিল সর্তক থাকতে, কোন তথ্য পেলে পুলিশকে জানানোর জন্য। কিন্তু এঘটনাকে কেউ কেউ অতি উৎসাহি হয়ে অতিরঞ্জিত করেছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, সম্প্রতি সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেজন্য বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে আমরা নাসিরনগরের লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি এবং হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা থেকে নাসিরনগর উপজেলার প্রবেশ মুখ এবং মাধবপুর উপজেলা থেকে নাসিরনগর উপজেলার প্রবেশ মুখে পুলিশের চেকপোষ্ট বসিয়েছিলাম।