শিল্পীজগতের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার জন্মদিন আজ।তিনি ৭১ বছর বয়সে আজ পা দিলেন কোকিল কণ্ঠের অধিকারী। তিনি গানের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত করিয়েছেন রুনা লায়লা। দীর্ঘ পাঁচ দশকে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। বাংলাদেশকে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দেয়ার পাশাপাশি উপহার দিয়েছেন বিভিন্ন ঘরানার হাজারো জনপ্রিয় গান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন দেশ-বিদেশের নানা সম্মাননা।
বাংলার গর্ব এই শিল্পীর জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে। রুনার বয়স যখন আড়াই বছর, তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। সংগীতশিল্পী মায়ের কাছে শিখেছেন সংগীতের প্রাথমিক ব্যাকরণ। এরপর করাচির সংগীতজ্ঞ আব্দুল কাদের পিয়ারাঙ্গ ও হাবীব উদ্দিন খানের কাছে তামিল নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে গান শুরু করেন রুনা। এরপর মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকের খাতায় নাম লেখান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্লেব্যাক করেন পাকিস্তানের অনেক ছবিতে।
১৯৭৪ সালে ‘এক ছে বারকার এক’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু হয় তাঁর। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু গানে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যান। ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি রুনা লায়লাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এ গানটি পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেরই গানপাগল শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তাঁর গাওয়া গজল গানও উপমহাদেশের শ্রোতাদের কাছে সেই সময়েই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।বাংলা-হিন্দি-উর্দু ছাড়াও গুজরাটি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু, বেলুচ, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষার গান তার কণ্ঠে প্রাণ পেয়েছে।মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি সংগীত পরিচালক-সুরকার নিসার বাজমিরের প্রতিদিন ১০টি করে তিনদিনে ৩০টি গান রেকর্ড করেন, যা পৃথিবীর একদিনে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি গানের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠায়।ক্যারিয়ার জুড়ে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে ছয় বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার।
। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।শুধু গানই নয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন আইকনেও পরিণত হয়েছেন তিনি। তাঁর সাজসজ্জা, পোশাক, গাওয়ার ভঙ্গি থেকে শুরু করে সবকিছুই তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয়।
তাঁর গাওয়া অসম্ভব জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে দামা দাম মাস্ত কালান্দার, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব, পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম বন্ধু ভাগ্য হইলো না, যখন থামবে কোলাহল, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, যখন আমি থাকবো না গো আমায় রেখো মনে।রুনা লায়লার স্বামী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর।এছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। এই বিশেষ দিনটিকে এই তারকা দম্পতি বিশেষভাবেই উদযাপন করার অপেক্ষায়।