জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে সব মৃত্যু সমানভাবে সমাজকে নাড়া দেয় না। যে মৃত্যু একটা গোটা সমাজকে কাঁপিয়ে দেয়, হাজার হাজার মানুষের মনে বাঁধ ভাঙা কান্নার সৃষ্টি করে সে রকম একটা মৃত্যু নিয়ে কিছু লিখতে এসেছি। যিনি আমার প্রিয় আদর্শবান শিক্ষক জনাব লিয়াকত আলী স্যার। মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু শিক্ষককের মৃত্যু হয়? আমার মনে হয় না।
গত ৩ ডিসেম্বর ২০২২ শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে ৫৭ বছর বয়সে স্যার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেলেন। তিনি মায়া ত্যাগ করলেও তার মায়াময় মুখের মায়া এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছি না। শেষ বেলা দেখার মুহূর্তটা ভুলতে পারছি না। স্যারের কাছে আমি কখনোই কড়া শাসনের মুখোমুখি হয় নি। আমার বাংলা হাতের লেখা তেমন ভালো ছিল না। একদিন ক্লাসে আমার লেখা দেখে স্যার বলছিলেন, মেয়েদের হাতের লেখা তো সুন্দর হওয়ার কথা তোমার লেখা সুন্দর করবে।
স্কুল জীবনে যদি স্যারের কাছ থেকে কোনো কড়া বাক্য শুনে থাকি তাহলে এটাই ছিল। আর স্যারের এ কথাটার জন্যই আজ আমার লেখাটা আগের থেকে ভালো।এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে যখন স্যার আমাদের বাড়িতে আসলো আরিফ স্যারকে সাথে নিয়ে, আরিফ স্যার আমায় জিজ্ঞেস করলো পড়াশোনার কি অবস্থা? তখনই সদ্য প্রয়াত লিয়াকত স্যার বলে উঠলেন, সে ভালো ছাত্রী ভালো রেজাল্ট করবে। খুশিতে তখন মনটা ভরে গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। একজন শিক্ষককের আদরমাখা শাসন আর অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো একটি বাক্য ভীষণ উৎসাহ উদ্দীপনা জাগায় শিক্ষার্থীর মনে।
স্যার যে শুধু আমার সাথে এমন করেছেন তা নয়। সকল ছাত্র- ছাত্রীদের সাথেই ছিল স্যারের সুন্দর সম্পর্ক। সবার সাথে তিনি সমান ব্যবহার করতেন। এই স্যার গোটা স্কুলের একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন।
যতদিন তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন ততদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি আমাদের হিসাববিজ্ঞান পড়াতেন। তিনি যে শুধুমাত্র এ বিষয়ে একজন শিক্ষক ছিলেন তা নয়। বরং তিনি আমাদের কাছে ছিলেন স্বয়ং একজন গাইড বই। বাহ্যিক অবয়বে একজন সাধারণ মানুষ।
একই সঙ্গে ছিলেন একজন সৎচরিত্রের সহজ-সরল জীবনে বিশ্বাসী মানুষ। যাকে দেখে ছাত্র- ছাত্রীরা নীতিবান হতে উৎসাহী হতো। যখন স্যারের মৃত্যুর সংবাদটা কানে আসলো আমি একদম বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু খবর সত্যিই সহজেই মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। স্যার আপনি হয়তো পৃথিবীতে বেঁচে নেই কিন্তু আপনার কর্ম, আদর্শ, নীতি এগুলো বেঁচে থাকবে সবসময়। আপনি বেঁচে আছেন হাজারো ছাত্র- ছাত্রীর অন্তরে। আপনার শিক্ষা কখনো মুছে যাবে না। আপনার স্কুল, আপনার শিক্ষার্থী, আপনার সমাজ আপনাকে ভুলতে পারবে না। দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার।
শেয়ার করুন