খবর সারাদিন রিপোর্ট :
লেখকঃআকিল এস. সাদ
‘The Earth revolves around the Sun.’ কিংবা ‘The Moon revolves around the Earth.’-বাক্যগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত।এই বাক্যগুলোকে চিরন্তন সত্য বলে ধরে আমাদের স্কুল-কলেজে ইংরেজি ব্যাকরণের অনেক নিয়ম-কানুন শেখানো হয়।কিন্তু এই বাক্য দুইটি বৈজ্ঞানিকভাবে কতটুকু সঠিক?আপাতদৃষ্টিতে এই বাক্যগুলোতে কোনোপ্রকার ভুল না থাকলেও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে বাক্য দুইটি-ই সম্পূর্ণভাবে ভুল!কারণ পৃথিবী সূর্যকে কিংবা চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়না।বরং পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ;এমনকি সূর্য নিজেও একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।আর এই বিন্দুটিকে বলা হয় ‘ভরকেন্দ্র’।তাহলে এই ‘ভরকেন্দ্র’ আসলে কী?সৌরজগতের ভরকেন্দ্র,যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Barycenter, হলো এমন একটি বিন্দু যেখানে সৌরজগতের সমস্ত গ্রহ ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর ভর সাম্যাবস্থায় থাকে।এই বিন্দুটি তাহলে কোথায়?এর একদম সহজ উত্তর হলো,এই বিন্দুটি সাধারণত সূর্যের ব্যাসার্ধের ভিতরেই অবস্থিত হয় এবং সৌরজগতের সমস্ত গ্রহ এই বিন্দুটির চারদিকে ঘুরতে থাকে।আর এজন্যই আপাতদৃষ্টিতে একদম প্রথম বলা উক্তি দুইটি সঠিক!তাহলে এই ভরকেন্দ্র কী সূর্যের ব্যাসার্ধের বাইরে হতে পারে?হ্যাঁ,অবশ্যই পারে।প্রথম ছবিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ভরকেন্দ্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে।তাহলে এরকম ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ কী?এর কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রহগুলোর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান এবং বৃহস্পতি গ্রহের দানবীয় আকৃতি।কোনো একটি সিস্টেমের ভরকেন্দ্র ওই স্থানের আশেপাশে থাকে যেখানে সেই সিস্টেমের বেশিরভাগ ভর পুঞ্জীভূত থাকে।আবার কোনো সিস্টেমে যদি ভর সমানভাবে বিন্যস্ত থাকে তাহলে ভরকেন্দ্র হয় তাদের ঠিক মাঝে।উদাহরণস্বরুপ বলা যায়,একটা স্কেলের ভরকেন্দ্র স্কেলটির ঠিক মাঝে।আবার একটি হাতুড়ির ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র হয় হাতুড়ির লোহার অংশের কাছাকাছি।
একইভাবে,সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি ভরযুক্ত বস্তুটি হলো সূর্য।সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯.৮৭% ভরই সূর্যে পুঞ্জীভূত আছে।ফলে খুবই স্বাভাবিকভাবেই ভরকেন্দ্র সাধারণত সূর্যের ব্যাসার্ধের ভিতর কিংবা তার আশেপাশের কোনো বিন্দুতে থাকে।কিন্তু তারপরও বিভিন্ন সময়ে গ্রহগুলোর বিভিন্ন অবস্থানের কারণে এবং বিশেষ করে বৃহস্পতি গ্রহের দানবীয় আকৃতির (পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩১৮ গুণ ভারী) কারণ এই ভরকেন্দ্র সূর্যের ব্যাসার্ধের অনেক বাইরেও চলে আসতে পারে।তাছাড়া শনি কিংবা ইউরেনাস এর মতো অধিক ভরযুক্ত গ্রহগুলোও এই ভরকেন্দ্র পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।আর যখন যেই বিন্দুতে এই ভরকেন্দ্র থাকবে,সেই বিন্দুকে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের প্রত্যেকটা বস্তু আবর্তিত হবে;এমনকি সূর্য নিজেও!
ভরকেন্দ্রের এই নিয়ম মহাবিশ্বের প্রতিটি স্টার সিস্টেম এবং যেকোনো সেলেস্টিয়াল বডির জন্য প্রযোজ্য।তাই পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার ঘূর্ণনটাও আসলে ভরকেন্দ্রের ভিত্তিতেই ঘটে।পৃথিবী ও চাঁদের সম্মিলিত ভরকেন্দ্র সর্বদাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ভিতর থাকে।পৃথিবী ও চাঁদের সম্মিলিত ভরকেন্দ্রের অবস্থান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে প্রায় ৪৩০০ কিলোমিটার দূরে যেখানে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার।পৃথিবী ও চাঁদ উভয়ই প্রকৃতপক্ষে এই বিন্দুটিকে কেন্দ্র করেই প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছে।কিন্তু বিন্দুটি যেহেতু পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ভিতর,তাই আমরা কেবল চাঁদকেই দেখি আবর্তিত হতে;ঠিক সূর্য ও সৌরজগতের বাকিসব বস্তুসমূহের মতো!উল্লেখ্য,এই ভরকেন্দ্রের কনসেপ্ট ব্যবহার করে কোনো স্টার সিস্টেমে গ্রহ আছে কিনা তা জানা যায়।গ্রহ সমূহের নিজস্ব আলো নাই।তাই তাদেরকে প্রায়শই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়।কিন্তু সেই ‘স্টার সিস্টেম’-এর তারাটি যদি দেখা যায় কোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে,তাহলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায় যে সেখানে কোনো ভারী বস্তু বিদ্যমান যার ফলে একটা ভরকেন্দ্র তৈরি হয়েছে যাকে কেন্দ্র করে তারাটি আবর্তিত হচ্ছে।অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবী সূর্যকে এবং চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তেমনটা হচ্ছেনা!