খবর সারাদিন রিপোর্টঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান এবং বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম সহ ১১৮জনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন, ছাত্রদল,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, ৮ ইউপি চেয়ারম্যান ও একাধিক শিক্ষককে আসামী করা হয়েছে। রোববার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলাম এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করার জন্য নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৪ আগস্ট উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় শেখ হাসিনার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় এই মামলা হয়।
উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব শাহাআলম পাঠান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে আরও ২০০-৩০০ জনকে।
মামলায় উল্লেখিত অন্যান্য আসামীরা হলেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক নাজির মিয়া ও তাঁর স্ত্রী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসীম পাল, সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম মাস্টার, জেলা পরিষদের সদস্য হাকিম রাজা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ধরমন্ডল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাহার উদ্দিন চৌধুরী, হরিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান ওরফে আঁখি, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আল হেলাল, যুবলীগের আহবায়ক রায়হান আলী ভূইয়া ও যুগ্ম আহবায়ক বানু চন্দ্র দেব, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, যুবলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, উপজেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি মোঃ নাসির মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত আহবায়ক এবং সাবেক সংসদ সদস্য একরামুজ্জামানের ব্যক্তিগত সহকারী এনামুল হুদা, উপজেলার গুনিয়াউক, চাতলপাড়, পূর্বভাগ, ফান্দাউক, চাপরতলা, ভলাকুট, গোয়ালনগর, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিতু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আক্তার হোসেন, মোঃ ফারুকুজ্জামান, মনসুর মিয়া (মনসুর আলী ভূইয়া), রুবেল মিয়া, আজহারুল ইসলাম ও ফারুক মিয়া, মন্দির ভাঙার আসামী হাজী সুরুজ আলী প্রমুখ। মামলার আসামীরা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ও পদধারী নেতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগষ্ট সকাল ১১ টায় নাসিরনগর উপজেলার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় শেখ হাসিনার পতনের এক দফা দাবিতে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে মামলার আসামীরা ককটেল, হাত বোমা, পিস্তল, দা, লাটিসোটা নিয়ে একত্রিত হয়ে সেখানে জড়ো হন।
মামলার প্রধান আসামী সাবেক সংসদ সদস্য একরামুজ্জামান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন ও কৃষকলীগের নেতা নাজির মিয়ার নির্দেশে অন্যান্য আসামীরা হাতে থাকা কালো পলিব্যাগ থেকে ককটেল ও হাত বোমা বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিক্ষেপ করেন। এতে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরিত বোমার স্ট্রিন্টারের আঘাতে ছাত্র-জনতা মারাত্মক আহত হয় এবং জানমালের ক্ষতি হয়। মামলার আসামীরা দা, লাঠি, লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে ছাত্র-জনতা ও পথচারীদের এলোপাথারি মারধর করেন। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থাকা ১৫-২০টি মোটর সাইকেলে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
মামলায় নাসিরনগর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বি এম ছালেম, শিক্ষক আলমগীর মিয়াসহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও আসামী করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মামুন জানান, মামলাটি আদালত গ্রহন করে নাসিরনগর থানার ওসিকে মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
শেয়ার করুন