খবর সারাদিন রিপোর্ট : রাত পৌনে তিনটা। যাত্রীরা অনেকেই গভীর ঘুমে কাতর। হঠাৎ বিকট শব্দ। সবার ঘুম ভেঙে যায়। ছোটা ছুটি শুরু হয় ট্রেনের ভেতর। মনে হয় যেন, শক্ত কোন বিস্ফোরণ ঘটেছে। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। ট্রেনের ভেতর থোকে বাইরে এসে দেখি নারী পুরুষের আত্মচিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তি। তখন গভীর কুয়াশায় আচ্ছন্ন গোটা ষ্টেশন এলাকা। ভেতর থেকে বের হওয়ার রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কারো হাত, কারো পা, এদিক সে দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এ সময় চোখের সামনে অনেককে মারা যেতে দেখি। এমন তথ্যই জানালো তুর্নানিশিতার ট্রেন যাত্রী বশির মিয়া। তার বাড়ি ঢাকা তিনি জানান, নিজে আনেকটা ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকট শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। মন্দবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো সালাম বলেন, আমরা গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কান্নার শব্দ। এখানে সেখানে ছিটকে পড়ে আছে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের মরদেহ। এলাকার সবাই বেড়িয়ে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করি।
সোমবার রাত ৩টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ ষ্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তুর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক। মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সংকেত) দেওয়া ছিল। কিন্তু তুর্ণার নিশীতার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তুর্নার গতি ছিল তখন ৮০ কিলোমিটার। তিনি আরো বলেন, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক সেই সিগনাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমার কোনো দোষ নেই। তুর্ণা নিশীতার যাত্রী কাজি ফজলে রাব্বি বলেন, উদয়ন এক্সপেস অন্য লাইনে ঢোকার আগেই বিপরীত দিক থেকে এসে তুর্ণা নিশীতা ধাক্কা দেয়। এতে শেষের তিনটি বগিতে আঘাত হানলে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। উদয়ন এক্সপ্রেসের যাত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রেনটি লাইন ক্রস করছিল। ওই সময় দ্রুত গতিতে এসে তুর্ণা নিশীতা ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয়। আমি সামনের বগিতে থাকায় হতাহত হয়নি। পেছনে ঝ, ঞ, বগিসহ আরেকটি বগির যাত্রীরা বেশি আহত হয়। আমরা সবাই ট্রেন থেকে নেমে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করি।
দুর্ঘটনার পর কসবা, আখাউড়া, ব্রাক্ষনবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জ হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) পাঠানো হয়। ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ৪০জন ভর্তিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করেছে। সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে মা, স্ত্রী, মেয়ে, ভাগ্নে বউসহ পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে একই ট্রেনে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)। তিনি জানান, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কারও পা নেই, কারও মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা টেনে আমাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন, পরিবারের বাকি ৪ সদস্য কোথায় আছে, বেঁচে আছে কি-না তাও জানেন না। উদ্ধার অভিযানকালে দেখা গেছে রেললাইনে রক্ত আর রক্ত। কোথাও মগজ পড়ে রয়েছে। কোথাও মাংস পিন্ড। নারীদের শাড়ী। সেলোযার। কামড়ার মধ্যে আটকা পড়ে রয়েছে।
তিনি জানান, সংঘর্ষের কারণে পাশের একটি বগি উপরে উঠে যাওয়ায় অনেকের কান্নার শব্দ শুনতে পান, ভোর রাত হওয়ায় তখন স্টেশনে তেমন লোকজন ছিল না, সময় মতো উদ্ধার না হওয়ায় অনেকেই মারা যান। এদিকে সন্ধ্যা নাগাদ নিহতের সকলের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান।
যারা নিহত হলেন
নিহতদের স্বজন ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা নিহতেদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করছেন। নিহতরা হলেন-চাঁদপুর হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুল রহমান (৫৫), চাঁদপুরের কুলসুম বেগম (৩০), চাঁদপুরের হাইমচরের মরিয়ম (৪), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫), চাঁদপুরের হাইমচরের কাকলী (২০), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২), হবিগঞ্জের বানিচংয়ের আদিবা (২), হবিগঞ্জের ভোল্লার ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারুরঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহামনি (৩), নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩)।
৮ ঘন্টা পর ট্রেনচলাচল স্বাভাবিক
রাত প্রায় সাড়ে তিনটায় মন্দাবাগ রেলষ্টেশনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের সকল প্রকার রেলযোগাযোগ। রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্রগ্রাম ও সিলেটের সাথে চট্রগ্রামের সরাসরি ট্রেনযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাহ্মনবাড়িয়া, আখাউড়া, কুমিল্লা, সালদানদী, তালশহর, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে বেশ কয়েকটি আন্তনগর ও লোকাল ট্রেন এবং মালবাহী ট্রেন। সকাল প্রায় ৯টায় আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে উদ্ধারকারী ক্রেন অকুস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় উদ্ধার কাজ শেষ হয়। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এ রেলপথে পূনরায় ট্রেনচালচল শুরু হয়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহায়। সৃষ্টি হয় উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
শিশুটিকে দেখে কাঁদছে সবাই!
লাশ ঘরে শিশুটির নিথর দেহ। ফুঁট ফুঁটে সুন্দর এই শিশুটি। পায়ে নেইল পলিশ দেয়া। পোশাক আশাক খুবই পরিপাটি। সদর হাসপাতালের লাশ ঘরে একনজড়ে শিশুটিকে দেখতে এসে অনেকেই চোখের পানি ছাড়ছে। শিশু লাশ ঘরে, মা-বাবা ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি। সাধারণ মানুষের আফসোসের শেষ নেই। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা সম্ভাবনাময় শিশুটির জীবন থামিয়ে দিয়েছে। সোমবার গভীর রাতে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবার মন্দবাগ স্টেশনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জনের মৃত্যুর তালিকায় ৩ বছরের শিশু ছোঁয়ামনিও রয়েছে। তার বাবা সোহেল মিয়া চট্রগ্রামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ও মাতা নাজমা বেগমসহ ৩ সদস্যেরন এই পরিবারটি সিলেট থেকে চট্রগ্রাম যাচ্ছিল। দুর্ঘটনায় কেড়ে নেয় শিশুটির প্রান। তাদের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং বড় বাজার এলাকায়। নিহত হওয়ার পর শিশুটির ঠাই হয় সদর হাসপাতাল মর্গে আর মা-বাবাকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরে হাবিগঞ্জ এবং সেখান থেকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে শিশুটিকে দেখে অনেক মানুষ সদর হাসপাতালে ভীড় করছে। ডোম ঘরে কথা হয় সানিয়া সুলতানার সাথে। তিনি জানান, সকালে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছবিটি দেখে নিজেকে মানিয়ে রাখতে পারিনি। কয়েক ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে শিশুটিকে দেখি। হাসপাতালের ডোম বাদশা মিয়া বলেন, জীবনে অনেক লাশ কাটা-ছেড়া করেছি। কিন্তু এমন একটি শিশুকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখে নি। মনের মধ্যে খুবই কষ্ট পেয়েছি। শিশুটির পিঠে ও মাথায় আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করেন হাসপাতালের এই ডোম। বিরাসার গ্রামের এক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান দুর্ঘটনায় যাদের অবহেলা রয়েছে তাদের বিচারের দাবী করছে।
উৎসুক জনতা হিসেবে এসে মরদেহ পেল!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও এলাকার মোঃ শাহাদৎ। উৎসুক জনতা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও এলাকার মোঃ শাহাদৎ। সেখানে এসে নিজের চাচা মজিবুর রহমান (৫০) ও চাচি কুলসুমার (৪৩) মরদেহ পেলেন তিনি। নিথর দেহে কসবা উপজেলার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারান্দায় শুয়ে আছেন তারা। শাহাদৎ জানান, মন্দবাগ এলাকায় থেকে ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন তিনি। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দ্র্ঘুটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন মরদেহ দেখতে। এসে বারান্দায় থাকা নিজের চাচা মজিবুর রহমান ও চাচি কুলসুমার মরদেহ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। তিনি আরও জানান, মজিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা করতেন। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে তিনি ও তার স্ত্রী চাঁদপুরে নিজ বাড়িকে ফিরছিলেন। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাদের ছেলে ফোন দিয়েছে খবর জানতে। আমি এখনও চাচা-চাচির মৃত্যুর খবর বাড়িতে জানাতে পারিনি।
রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলে
আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মন্দাবাগ রেলষ্টশনে দূর্ঘটনা কবলিত স্থান পরিদর্শন কালে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এ কথা জানান। তিনি জানান, রেলওয়ের স্মরণকালের ইতিহাসে বৃহৎ ব্যয়ে এই লাইনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া-সিলেট লাইন রেললাইন আধুনিক ডুয়েলগেজ করাসহ এই রুটের আরও বেশ কয়েকটি রেল স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তূর্ণা নিশীথার লোকোমোটিভ মাস্টার ও সহকারী মাস্টারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার সিগন্যাল ভঙ্গ করেছেন। আমরা বিস্তারিত জানার জন্য জেলা প্রশাসন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এখানে উদয়ন এক্সপ্রেসের কোনো ত্রুটি দেখছি না। তিনি প্রত্যক নিহততের পরিবারকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরন ও আহত পরিবারকে ১০ হাজার টাকা প্রদান ঘোষনা দেন। দূর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে লাইনে ঢুকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে ধাক্কা দিয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করে প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যানের উদ্ধার তৎপরতা
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার ভূইয়া জীবন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার সময় মন্দবাগ রেলস্টেশনের ৫/৭টি পিকআপ ভ্যান দাড়িয়ে ছিল। ঘটনার পরপর সর্বপ্রথম পিকআপ ভ্যানের চালাকরাই উদ্ধার কাজ শুরু করে দ্রুত হতাহতদের পিকআপভ্যানে করে পাশর্^বর্তী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হতাহতদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য এবং তথ্য দেয়ার মসজিদের মাইক থেকে প্রচার চালানো হয়। যেসব যাত্রী ট্রেনে অবস্থান করছিল তাদেরও খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরে বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌছার ব্যবস্থা করেন।
অতিরিক্ত যাত্রীছিল উদয়নে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের আগে সিলেট থেকে ৭০৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় উদয়ন এক্সপ্রেস। উদয়নের আসন সংখ্যা ১৬টি বগিতে ৬২২টি থাকলেও ঘটনার রাতে মোট যাত্রী ছিল ৭০৩ জন। তার ওপর প্রায় প্রতিটি বগিই ছিল নড়বড়ে। রেলওয়ের একটি সুত্র জানায়, উদয়নের ১৬টি বগি রয়েছে। যার আসন সংখ্যা ৬২২টি। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৭০৩ জন। এই রুটের নিয়মিত চলাচলকারী এই ট্রেনটি প্রতিদিনের মতো সোমবার রাত পৌনে ৯টায় ১৬টি বগি নিয়েই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেল স্টেশনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ যাত্রী নিহত ও আরও শতাধিক আহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্বল বগি দিয়ে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নড়বড়ে বগি দিয়ে সিলেট রুটে শুধু উদয়নই নয়, সবকটি ট্রেন চলাচল করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়া ডাবল লেন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা) কাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, উদয়নের বগিগুলো পুরোনো বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় বগিগুলো যুক্ত করা হয়েছে। মূলত তূর্ণার ইঞ্জিন উদয়নের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করেছে। সে কারণে উদয়নের কোচগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা নামে দুটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। উদয়ন ও পাহাড়িকার যাত্রা শুরু ১৪টি বগি নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে এ সংখ্যা কমিয়ে করা হয় ৯টি। তাছাড়া, নড়বড়ে বগি দিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে এসব ট্রেনে বগির সংখ্যা ১৬টি করা হয়।