সাইদ আহমেদ বাবু : মাত্র এক কাল রাতেই সব শেষ! পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকের র্নিমম বুলেট যেমন
বাংলাদেশের প্রগতির ধারাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি জাতির পিতার দুই
কন্যা হাসিনা-রেহানা’র পৃথিবী যেন উলট-পালট করে দিয়েছিল। মা-বাবা-ভাই সহ স্বজন
হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত অসহায় দু-বোনের জীবন হয়ে পড়ে কাণ্ডারী বিহিন
নৌকার মত। বিশেষ ভাবে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনার লড়াইটা ছিল
অন্যরকম যুদ্ধ। এত কষ্ট বুকে কিভাবে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা! কোনও
দিন কারও কাছে নত হননি। হয়তো তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে,
আমাকেই বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে হবে। জনশ্রুতি আছে দুঃখ আর বিপদের
দিনেই মানুষকে সঠিক ভাবে চেনা যায়। যারা র্দুবল তারা ভেঙ্গে পরে আত্মহারা হয়ে
পড়ে। কিন্তু সাহসীরা র্দুভোগ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সামনের দিকে এগিয়ে
যায়।তাঁদের ভেতরে লুকানো শক্তি জেগে ওঠে। সে যেন ভাবের গোপন সৌর্ন্দয। তাঁদের
আরো উজ্জ্বল করে। শেখ হাসিনা ছিলেন, এই শেষের দলের মানুষ। শেখ হাসিনা মনে হয়
ইন্দিরা গান্ধীর পরার্মশটি সারা জীবনের জন্য মনে রেখেছিলেন “এখন কোনো
অবস্থাতেই তোমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না”।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার দিন।ওই কালো
দিনেই কিছু সামরিক অফিসার তাঁর পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংস ভাবে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ
র্নিমমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে
পৃথিবিতে উচ্চাসনের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সোনারবাংলা কায়েম করে বাংলাদেশ
থেকে দারিদ্র দূর করতে চেয়েছিলেন। তাকে রাতের অন্ধকারে পৃথিবী থেকে চিরদিনের
জন্য সরিয়ে দেওয়া হল। মাত্র ২৮ বছর বয়সে শেখ হাসিনা তার বাবা মা ভাইদের ছেড়ে
পরিবার থেকে প্রিয় স্বদেশের মাটি থেকে, হাজার মাইল দুরে স্বামীর র্কমস্থলে
প্রবাসে চলে গেলেন। কে জানতো এটাই শেষ দেখা!
পরিবারের দুই মেয়ে বিদেশে থাকলেও দেশে ফেরার অনুমতি ছিল না। কারণ সপরিবারে
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চক্রান্তকারীরাই তখন বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায়। যারা তাঁকে
হত্যা করেছিল,তাদেরকে নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। কেউ মন্ত্রী বা কেউ বিদেশে
রাষ্ট্রদূত হিসেবে পুরস্কৃত হন। এটা খুবই লজ্জার কথা। সেজন্য আমাদের যা দুঃখ, সে
দুঃখকে ছাপিয়ে লজ্জাও কোন অংশ কম নয়।
বাঙালির হাজার বছরের পুঞ্জিভূত গ্লানি, কালিমা আর অপবাদ কে অপনোদন করতে
আর্বিভূত হলেন একজন মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি, বাংলা
ভাষাভাষীদের জন্য রচনা করলেন এক অমর গৌরবগাথা, যার নাম বাংলাদেশ। সৃষ্টি
করলেন এক নতুন ইতিহাস, যে ইতিহাস একাধারে অনন্য ও বীরত্বব্যঞ্জক। তাঁর
অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু একশ্রেণীর প্রতিবিপ্লবী ও
প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের স্বাধীনতা ও র্সাবভৌমত্বকে কখনোই মেনে নিতে
পারেনি। ওই জ্ঞানপাপীরা জানেনা সমগ্র বাঙালি জাতি হৃদয় জুড়ে যার নাম খোদিত হয়ে
আছে, ইতিহাসের পাতা থেকে তাকে মুছে ফেললেও মানুষের হৃদয় থেকে কখনোই তাকে
মুছে ফেলা যাবে না। কারণ ইতিহাসের জন্য বঙ্গবন্ধু নন, বঙ্গবন্ধুর জন্য
ইতিহাস।বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু সময়ের জন্য মুছে রাখা গেলেও
ইতিহাস নিজের প্রয়োজনে এই মহান নেতাকে তার বক্ষে ধারণ করেছে।
তিনি শত্রুর সাথে আপোষ করেননি দেশ ও জনগণের র্স্বাথকে সারাজীবন সমুন্নত
রেখেছেন। দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই ঘাতকচক্র জাতির জনককে
হত্যা করলেও তার আর্দশ ও নীতি কে ধ্বংস করতে পারেনি । তিনি সোনার বাংলার
স্বপ্ন দেখেছিলেন, এখনো তিনি বাংলার র্দুজয় তারুণ্যের হিমালয় র্দুযোগের
অমানিশায় উজ্জ্বল বাতিঘর। যতদিনে বাংলার চন্দ্র র্সূয উদয় হবে, ততদিন ভোরের
শুকতারার মতই বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে, প্রজন্ম থেকে
প্রজন্মান্তের ।
হত্যাকারীরা পাকিস্তানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চেয়েছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ
সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং
মন্ত্রীসভার আরও দুই সদস্য এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও মনসুর আলীকে প্রাণ
দিতে হল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপদ ভূমিতে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পাকিস্তান
অভিনন্দন জানিয়েছিল কথিত ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ’কে। শেষ অবধি
বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র হয়নি, তবে তার র্ধমনিরপেক্ষতার বির্সজিত হয়েছে,
ইসলাম হয়েছে রাষ্ট্রর্ধম। আর সমাজতন্ত্র বাতিল হয়েছে।
এমন সুন্দর জ্যোর্তিময় একজন মানুষকে, এমন পরির্পূণ একটা সমৃদ্ধিকে, এমন
একটা বৈভব ইতিহাসকে কি করে হত্যা করতে পারে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস
করতেন কোন বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারেনা। তাই প্রায় নিরাপত্তাহীন ভাবে
সবখানে যাতায়াত করতেন। সুরক্ষিত গণভবন ছেড়ে ধানমন্ডিতে সবুজ ছায়া ঘেরা লেকের
ধারে নিজের সাদামাটা বাড়িটাতে থেকে দেশের মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা
অনুভব করতে চাইতেন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের কেউ তার প্রতি
বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না, সে ধারনা তার ভ্রান্ত ছিল। শত্রু তার এই প্রেম আর
বিশ্বাসের জায়গাটাকে ঠিকমতো কাজে লাগিয়েছিল। ফলে এই আঘাতের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ গড়ে তোলা তাই হয়েছিল এত কঠিন। সেটা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে হলো।
ফলে বিশ্ব হারালো মহান নেতা, আমরা হারালাম জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তমনের মানুষ। সোঁদা মাটির গন্ধ মাখা একজন খাঁটি মানুষ বাঙালি।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল র্পযন্ত
মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ করেছিল।
মৃত্যু প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটি অবধারিত সত্য কিন্তু আমরা কি তাকে যথাযথ
সম্মান দিতে পেরেছি, তার মৃত্যুর পর ২১ বছর ধরে তিনি এ দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে
নিষিদ্ধ ছিলেন কেন? কি তার অপরাধ।সামরিক বাহিনীর কতিপয় সেনাসদস্যের হাতে
নিশংস খুন হয়েছিলেন বলে কি তার প্রতি আমাদের এই আচরণ। ভারতের জাতির পিতা
মহাত্মা গান্ধী ও র্দুবৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের শাসকগোষ্ঠী
তাকে জাতির পিতা থেকে নিষিদ্ধ করে দেন নি, তাকে তার অবস্থানে রেখে, যথাযথ
র্মযাদায় অধিষ্ঠিত রেখেছেন। শাসকগোষ্ঠী কি জনগন কেউ তার অবমাননা করেননি।
এখানেই ক্ষান্ত নয়, তারা ইতিহাস বিকৃতির মহোত্সবে মেতে উঠেছিল। স্বাধীন বাংলার
ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার ধ্বংসযজ্ঞে রূপান্তরিত করার প্রয়াসে মগ্ন ছিল, যে
অশুভ শক্তি মুজিবকে হত্যা করেছে তারা হয়তো সেখানেই থেমে থাকবেনা।নব্যসৃষ্ট
বাংলাদেশকে ফের অন্ধকার রাজত্বে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আমাদের সৌভাগ্য
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা সেদিন ঢাকায় ছিলেন না। যদি
তাদেরকেও ঘাতকের বুলেট খুঁজে পেত তাহলে আজ বাংলাদেশে মুজিব আর্দশের সরকার
পরিচালিত হতো না। আজ জীবিত বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা মৃত বঙ্গবন্ধু যে অনেক অনেক
বড়, সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে গত দুই দশকের মধ্যে।
মানুষ জন্মায়, মানুষ মরে। কতলোক আসে, কত লোক যায় সমুদ্রের ধারে হাঁটার মত।
সমুদ্রের ধারে যে বালি সেত মুছে যায় কিন্তু কারো কারো পায়ের দাগ রয়ে যায় যা
মোচবার নয়। তেমন একজন বঙ্গবন্ধু, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। কবি
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ মরণে তাহাই তুমি করে
গেলে দান। বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে এই কথাটি প্রযোজ্য। তিনি সঙ্গে করে এনেছিলেন
মৃত্যুহীন প্রাণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সেই ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’ তিনি জাতিকে দান
করে গেছেন. তা না হলে ১৫ আগস্টের মহাবির্পযয়, এরপর জাতি আবার সাহসের সঙ্গে
দাঁড়াতে পারত না। সামরিক অথবা স্বৈরাচারী শাসনের অক্টোপাশে এখনো বন্দি
থাকতো। তাঁর গৃহবধু কন্যা এখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার শক্তি আবার ক্ষমতায়
ফিরে আসতে পারতো না। র্বতমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র
র্ধমান্ধ চেতনাধারীখুনি-ঘাতকেরা পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকেও একটি তালেবান
রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলতো। বঙ্গবন্ধুর সেই শূন্যতা বেচে থাকা শেখ হাসিনা দূর
করেছেন। অসম সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি সকল ষড়যন্ত্র ও নিত্য নব হত্যা
প্রচেষ্টা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার ও শাস্তি র্কাযকর করেছেন।
শেখ হাসিনা না-থাকলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাজাকারদের জেলে ঢুকিয়ে ফাঁসি
র্কাযকর কে করতো? আমেরিকার চোখ রাঙানি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিরন্তর চাপ,
বিএনপি ও জামাতের কাঁধে চড়ে পাকিস্তানের আইএসআই-এর চক্রান্ত, তথাকথিত
সুশীল সমাজের একাংশ ও একশ্রেণীর মিডিয়ার অব্যাহত বিরোধিতার মুখে এক অসম
সাহসী নারী নেতৃত্বের ক্ষমতায় থাকা ও দেশকে র্অথনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে
নেওয়া সম্ভব হতো না যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকতো যার চেতনায় ও রক্তে
বঙ্গবন্ধুর আর্দশের শক্তি-সাহস ও প্রেরণা।
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে হাসিনা-রেহানা দুজনেই বেলজিয়ামে বাংলাদেশের
রাষ্ট্রদূতের বাসায় ছিলেন। সেই রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে অনেকটা
জোর করে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তাঁদের আশ্রয় দিয়েছিলেন সে সময়
র্জামানিতে র্কমরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। সে সময়
বাংলাদেশের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ইউরোপ ছিলেন। শেখ
হাসিনা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একটি সংবাদ
সম্মেলন করে বিবৃতি দেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তা অবৈধ
সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনার এই অনুরোধ ড. কামাল হোসেন রাখেন নি। ড. কামাল
হোসেন সংবাদ সম্মেলন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। সেদিন যদি এই বিবৃতি
দেওয়া হতো এবং শেখ হাসিনা যদি ড. কামাল হোসেনকে এই সংগ্রামে তার পাশে পেতেন,
তাহলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দ্বারা গঠিত সরকার আর্ন্তজাতিকভাবে যথেষ্ট
প্রশ্নের মুখে পড়তে পারত। কারণ ওই সময়ে পৃথিবীর অনেক বড় নেতারাই বঙ্গবন্ধুর
হত্যাকে মেনে নিতে পারেন নি। তারা চাচ্ছিলেন বাংলাদেশের সরকারের ভেতর থেকে এবং
সরকারি দলের ভেতর থেকে এর একটা প্রতিবাদ হোক। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর মতো
নেতাকে এবং সেই খুনিদের দ্বারা গঠিত সরকার আর সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
উঠলে ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা ও জনগণ অবশ্যই সেই প্রতিবাদকে
সর্মথন করত, সর্মথন মিলত আমেরিকার গণতন্ত্রকামী জনগণেরও। কিন্তু সেদিন ড:
কামাল হোসেনকে পাশে না পাওয়ার ফলে শেখ হাসিনা এই সংগ্রামের পথে যেতে পারেন
নি।
তারপর ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ড থেকে তিনি স্বৈরাশাহী জিয়া বিরোধী আন্দোলন শুরু
করেন। বাবা-মা-ভাইসহ স্বজন হারানোর অসহনীয় বেদনা বুকে নিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ
রেহানাকে বিদেশে শরর্ণাথীর হিসেবে র্নিবাসনে কাটাতে হয় ১৯৮১ সাল র্পযন্ত্। তিনি
রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন সে দেশের
তত্কালীন ভারতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি তাঁর পরমানু বিজ্ঞানী স্বামীর
জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেন।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু কোন ছোটখাটো ঘটনা ছিল না। আজকের দিনে বসে হয়ত তা উপলব্ধি
করা সম্ভব নয়। সেই আঘাত পেয়েও দেখা যাচ্ছে অবিচল একা শেখ হাসিনা এক হাতে
সামলাচ্ছে পিতার মৃত্যুর পরর্বতী সবকিছুকে। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী
হওয়ার আগেই নিরবছিন্নভাবে কাজ করে গেছেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে র্পযন্ত্ এই প্রবাস জীবনে শেখ হাসিনা কখনও রাজনীতি থেকে
দূরে থাকেন নি। বরং তিনি তখনই যুক্ত হতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়
রাজনীতির সঙ্গে। কিন্তু সে সময়ের নেতারা তা আমল নেননি। দুই থেকে তিন বছর
আগেই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দেশে ফিরতে পারতেন। তিনি
আরও আগে দেশে ফিরলে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের মূল আশ্রয়দাতা বিএনপি
নামক দলটিও শক্তিশালী হতে পারত না। সেদিন শেখ হাসিনার এই অনুরোধ রাখলে
বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ যে ভিন্ন হতে পারত সেটাও হতে দেননি। ‘৮১ সালের
আগেও তিনি দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার
স্বদেশ প্রত্যার্বতনে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে।
দেশের সবচেয়ে পুরনো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ
সম্মেলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি
র্নিবাচিত করে। তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনের
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফিরে আসেন।
সাহস আর উদ্দাম নিয়ে সত্য, ন্যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও গনতন্ত্রের
পুনরুদ্ধারের মহান ব্রত নিয়ে তার এই স্বদেশ প্রত্যার্বতন। জাতির মহানায়কের মহান
অবদানকে তুলে ধরবার জন্য, সত্যের পসরা সাজিয়ে অপরূপ শৈল্পিকতায় সত্যকে তুলে
ধরেছেন মিথ্যের আধারে ঘুমিয়ে থাকা জাতির সামনে। দলের কান্ডারি হয়ে সেদিন
মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা ।
শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার নেন তখন তার বয়স ছিল
মাত্র ৩৪ বছর। দুটি শিশুসন্তানকে বিদেশে রেখে তিনি ইতিহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ
করতে দেশে চলে এসেছিলেন। জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য।
এসেছিলেন ’৭৫-এর রাজনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণ করার লক্ষ্যে।এসেছিলেন পিতার
অসমাপ্ত র্কতব্যভার পালন করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। এসেছিলেন বাংলাদেশকে
মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে নিতে। এসেছিলেন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে
ভালোবেসে।এই গত ৩৯ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি এই দায়িত্বভার বহন করে
চলেছেন।এই কাজ করতে গিয়ে বারবার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখে পড়তে হয়েছে জাতির
জনকের কন্যাকে। বারবার স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি তাঁর ওপর বুলেট ও
গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাঁকে শেষ করে দিতে চেয়েছে। দেশে ফিরেই বাংলার মানুষের ভাত
ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতিকে উপহার দিয়েছেন পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তি ও
স্বাধীনতার সাধ। আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন
থেকে শুরু করে জাতির বুকে চেপে বসা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং
মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অর্ভ্যথনা জানাতে সেদিন র্কুমিটোলা
বিমানবন্দরে লাখো জনতার সমাবেশ ঘটে। বিমানবন্দর থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি
পযন্ত রাস্তার দু-পাশে সারিবদ্ধ মানুষের র্দীঘ প্রতীক্ষা এক নজর তাকে দেখা।
রাজধানী ঢাকা শহর সেদিন পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। কালবৈশাখী ঝড় ও
প্রবল বৃষ্টি কিছুই মানুষের স্বতঃর্স্ফূত উৎসাহ-উদ্দীপনাকে এতটুকু বিঘ্নিত করতে
পারেনি। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের মাটি র্স্পশ করলে সৃষ্টি হয় এক
আবেগঘন মুর্হুত। আনন্দ আর বিষাদের অশ্রু দিয়ে দলের নেতা-র্কমী ও সাধারণ
জনতা তাকে বরণ করে নেয়। ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে মানিক মিঞা এভিনিউতে লাখ লাখ
জনতার মাঝে এক আবেক তারিত বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ র্কমী হিসেবে আমিও
সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজে
লাখো জনতা মিছিল সহযোগে তাদের প্রিয় নেত্রীকে নিয়ে আসে বাঙালির জাতীয় মুক্তির
সূতিকাগার, জাতির জনকের স্মৃতিঘেরা ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ির সম্মুখে, যেখানে
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয় র্মমান্তিক এক বিয়োগান্তক ঘটনা, জাতির
জনকসহ পরিবারের উপস্থিত সকল সদস্যের রক্তাক্ত, নিষ্ঠুর, পৈশাচিক হত্যাকান্ড।
কিন্তু বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন না শেখ হাসিনা। বাহিরে বসে নিহতদের
জন্য দোয়া করলেন আগত সবাইকে নিয়ে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী র্নিবাচিত হওয়ার পর দেশে ফেরারপর, তাঁর পেছনে সাধারণ
মানুষর অকুন্ঠ সর্মথন দেখে তাঁকে আর ঘাঁটাতে সাহস পায়নি তখনকার ক্ষমতাধররা।
কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যারা পাক সেনাদের হয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই
রাজাকার বাহিনী কিন্তু বসে ছিলনা। একের পর এক প্রায় ২৩-২৪ বার শেখ হাসিনার
প্রাণনাসের চেষ্টা চালিয়েছে। সবচেয়ে বড় হামলা অবশ্যই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।
ঢাকার একটি জনসভায় ভাষণ দেয়ার সময় গ্রেনেট হামলা হয় তাঁর উপর।
মারাত্মকভাবে আহত হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু নারী নেত্রী আইভি
রহমানসহ ২৪জন প্রাণ হারান। তাই নেত্রীকে সদা র্সবদা কঠিন নিরাপত্তার বলয়ে
থাকতে হচ্ছে।
বাংলার মাটিতে পা রেখে এই মাটি ছুঁয়ে শেখ হাসিনা সেদিন জাতির জনক ও একাত্তরের
শহীদদের রক্তের নামে ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার, সেনা শাসকদের কবল
থেকে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার উদ্ধার এবং মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে
পুনঃপ্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন। শুরু হয় তার জীবনের নিরন্তর, নিরবচ্ছিন্ন এক
কঠিন সংগ্রাম, যা আজ ৩৯ বছর ধরে বিস্তৃত।
রাজনৈতিক পরিবারে তার জন্ম (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সাল)। রাজনৈতিক পরিবেশের
মধ্যেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে অনেক কিছু তিনি
প্রত্যক্ষ করেছেন। কখনও কখনও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। আবার পাকিস্তানের ২৪
বছরের মধ্যে ১২ বছর বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনকালীন নানা দুরবস্থা ও তিক্ত
অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে প্রথমে আজিমপুর র্গালস
স্কুল, এরপর ইডেন র্গালস কলেজ, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন শেখ
হাসিনা সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেন। তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ
ছাত্রী সংসদের র্নিবাচিত ভিপি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ’৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-র আগরতলা
মামলাবিরোধী ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি রাজপথের মিছিলে শামিল হয়েছেন।
১৯৭০-এর র্নিবাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়ে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর তার সুযোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ র্নিবাচনে জয়লাভ
করে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত
জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে জনগণের বিপুল সর্মথন ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনার
দ্বিতীয়বারের সরকার গঠন। নানা অজুহাতে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর
রাজনৈতিক সহযোগী, যুদ্ধাপরাধী জামাতে ইসলামীর র্নিবাচনের পথ পরিহার করে ভিন্ন
পন্থায় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করে দিয়ে দেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির
জাতীয় সংসদ র্নিবাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক
ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তিনি এককভাবে যে দৃঢ়তা, দূরর্দশিতা ও সাহসী
নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য শিক্ষণীয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বর্হিবিশ্বে সমাদৃত। এখানে পৌঁছাতে তাকে
অনেক চ্যালেঞ্জ আর বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র
হয়েছে। একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন, কারাগারে থেকেছেন। ২০০৭-০৮ সালে সেনা
সর্মথিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রায় বছরকাল সাবজেলে তার
নিঃসঙ্গ বন্দিজীবন কেটেছে। একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। প্রহসনমূলক
বিচারের আয়োজন হয়েছে। রাজনীতি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা দেশের বাইরে
র্নিবাসনে পাঠানোর অপচেষ্টাও হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রধান দিক হচ্ছে, তিনি জাতির জনকের কন্যা। বঙ্গবন্ধুর
রক্ত তার ধমনিতে প্রবাহমান। পিতার অনেক আর্দশই শেখ হাসিনা জেনেটিক্যালি
পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ভক্ত এ দেশের কোটি কোটি মানুষের
হৃদয়জুড়ে তিনি রয়েছেন। তাদের স্নেহ ও ভালোবাসায় তার জীবন সিক্ত। দ্বিতীয়ত, তার
রয়েছে আওয়ামী লীগের মতো এমনই একটি অভিজ্ঞ, ঐতিহ্যবাহী, সুদৃঢ় সংগঠন, দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চল র্পযন্ত যার রয়েছে অসংখ্য র্কমী, সর্মথক, শুভানুধ্যায়ী; যে দল
দেশের বৃহত্তম; যে দল কালোর্ত্তীণ (প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯) এবং নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান;
যার রয়েছে এ দেশের স্বাধীনতাসহ যা কিছু শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকর তার সিংহভাগ
র্অজনের মূল কৃতিত্ব।
তৃতীয়ত, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে সৎ, সাহসী, র্দুনীতিমুক্ত,
জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আত্মপ্রত্যয়ী রাজনৈতিক নেতৃত্বের
বড়ই অভাব। সেক্ষেত্রে, শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম এবং তিনি নেতৃত্বের এসব গুণের
অধিকারী।
চর্তুথত, শেখ হাসিনা ব্যক্তিজীবনে যেমন খুবই র্ধমপ্রাণ, তেমনি একই সঙ্গে
সেক্যুলার। প্রকৃত র্ধম বিশ্বাসের সঙ্গে সেক্যুলারিজমের কোনো বিরোধ নেই।
বাংলাদেশের মানুষও একই সঙ্গে র্ধমপ্রাণ ও অসাম্প্রদায়িক। এটি হচ্ছে আমাদের
র্দীঘ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমাদের দেশের রাজনীতিতে তাই শেখ হাসিনা
হচ্ছেন এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির র্সাথক প্রতিনিধি।
পঞ্চমত, শেখ হাসিনা মনে-প্রাণে একজন আধুনিক মানুষ। তিনি একাধিক গ্রন্থেরও
প্রণেতা।
ষষ্ঠত, অতীত সম্বন্ধে তিনি যেমন সচেতন, তেমনি একই সঙ্গে ভবিষ্যতমুখীও। তার ‘ভিশন-২০২১’ এরই র্সাথক প্রমাণ।
শেষত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
শক্তির ঐক্যের প্রতীক।
সামগ্রিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও আর্দশিক ছায়াতলে বেড়ে ওঠে শেখ হাসিনা
নিজ গুণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বের বিশেষ একটি স্থান করে নিতে সক্ষম
হয়েছেন। তিনি জাতিকে অনেক দিয়েছেন। এরপরও তার কাছে জাতির প্রত্যাশা আরও
অনেক, কেননা তিনি শুধু রাজনীতিক বা প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ‘মাদার অব
হিউম্যানিটি’। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে
নিতে কাজ করছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে ঝড়-তুফান, মৃত্যুশঙ্কা উপেক্ষা
করে, তিনি এখন বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন
এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
তাঁর দেশপ্রেম, সততা ও যোগ্যতা দিয়ে চূড়ান্ত লড়াই করে যাচ্ছেন।
পরিশেষে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসাকে আমি দেখি বাংলাদেশের
স্বাধীনতার পরির্পূণতার লক্ষে ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস হিসেবে। একই
সঙ্গে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যার্বতন হচ্ছে আমার দৃষ্টিতে
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বির্নিমাণের সোপান।
বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্র্যাত্যার্বতন দিবসে মধুমতি
পাড়ের কন্যাকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তাঁর র্দীঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা
করে অনুভূতি প্রকাশ করছি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ঠিক এভাবেই ‘আজি
দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী-, তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী!,
ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!, তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার
মন্দিরে।’ ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিনটিকে আমি দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী
প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার’ অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই ‘বাংলাদেশ’ আজ
বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সমাজকে অন্ধকার থেকে
আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই কঠিন সত্যের কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জীবন
সায়াহ্নে এসে জানিয়ে গেছেন আমাদের- “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/আপনার
রূপ/চিনিলাম আপনারে/আঘাতে আঘাতে/বেদনায় বেদনায়;/সত্য যে
কঠিন/কঠিনরে ভালোবাসিলাম/ সে কখনো করে না বঞ্চনা।”
র্বতমান বাংলাদেশের পথ-দিশারী শেখ হাসিনার পথও সত্যের পথ। আজও জনগনের
ভালোবাসাই তার প্রাণশক্তি, এদেশের সাধারণ মানুষই তার রক্ষাকবচ। জনগনের
উদ্দেশ্যেই তিনি তার জীবন উৎসগ করেছেন।
তাই তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে সত্যের জয়গান গেয়ে চলেছেন শুরু থেকেই। আজ মানুষের মনে
এই প্রত্যাশা জন্মেছে যে, তার র্নিদেশিত পথে একদিন জাতির মঙ্গলাকাঙক্ষা বিজয়ী
হবে- সত্য ও সুন্দরে জয় হবে।সত্য কঠিন,তবুও সুন্দর! সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।
শেয়ার করুন