মোজাম্মেল চৌধুরী : বালুর পাহাড় গায়েব। সরকারী ভাবে বালু বিক্রির ব্যবস্থা হওয়ার আগেই এর বেচাবিক্রি শেষ। কয়েক কোটি টাকা মুল্যের এই বালু লোপাটের অভিযোগ উঠৈছে আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো: হানিফ মুন্সির বিরুদ্ধে। এনিয়ে তোলপাড় সেখানে। রেলপথ মন্ত্রনালয়েও দেয়া হয়েছে অভিযোগ। তবে হানিফ মুন্সি বালু বিক্রির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এরআগে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর কাছে এব্যাপারে সহায়তা চান। তাকে বলেন-‘মামারে সহযোগিতা করবা,ডিসটার্ব করলে কেমন হয়না।’ এই ফোনালাপও ভাইরাল হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চর-সোনারামপুর এলাকায় মেঘনা নদী খননে উঠা বালু মজুদ করা হয় স্থানীয় রেলষ্টেশন ও সাইলোর মাঝামাঝি রেলওয়ের একটি জায়গায়। ওই জায়গা বন্দোবস্ত আনা কয়েকজনসহ ৪০/৫০ জনের একটি দলের বিরুদ্ধে সেখানে নদী খননের বালু রেখে বিক্রির অভিযোগ উঠলে রেলওয়ের সহকারী এস্টেট অফিসার, ফিল্ড কানুনগো ও আমিন সেখানে এসে বাধা দেন। ওই বছরের পহেলা মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তাকে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী চিঠি দিয়ে তাদের জায়গায় অবৈধভাবে প্রবেশ ও বালু ফেলে ভরাট করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তারপরও বালুর ডিপো করা হয় সেখানে। পরবর্তীতে রেলওয়ে তাদের জায়গায় রাখা বালু নিলামে বিক্রি করবে বলে জানায়। এরপর ২০১৯ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর একটি প্রকাশ্য নিলাম হয়। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হন চরচারতলা গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মুন্সি। কিন্তু রেলভবন সেই নিলাম অনুমোদন দেয়নি। এরপর এনিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন হানিফ। যা এখনো নিস্পত্তি হয়নি। কিন্তু এরইমধ্যে মো: হানিফ মুন্সি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কয়েক মাস আগে রেলওয়ের এই বালু ক্ষমতার জোরে বিক্রি করতে শুরু করেন। এরআগে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে তিনি জানান দেন বালুর টেন্ডার তিনি পেয়েছেন। রেলপথ মন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগ এবং সরেজমিনে খোজখবরে জানা যায়,চেয়ারম্যানের ছেলে জনি মুন্সি ও ভাইয়ের ছেলে রনি মুন্সি এই বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ট্রাক-ট্রাকটরে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিক্রি করা বালু। ধারনা পাওয়া গেছে, এখানে মজুদ করা প্রায় ৪৫/৫০ লাখ ঘনফুট বালুর প্রায় সবই বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রতি ফুট বালু ৪ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। সেই হিসেবে বালুর দাম আসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। মেসার্স মিজান কনষ্ট্রাকশন নামে বানানো একটি রশিদ দেয়া হয় বালু ক্রেতাদের ।
এদিকে অবৈধভাবে বালু বিক্রিতে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তার যোগসাজস থাকার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এক সংবাদকর্মী এবিষয়ে ওই রেল কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে ফোন করলে ওই কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সিকে বিষয়টি জানান এবং তাকে ফোনকারী সংবাদকর্মীর নাম্বার দিয়ে দেন। এরপরই হানিফ মুন্সি তাকে ফোন দিয়ে ভাগিনা সম্বোধনে বালু বিক্রিতে সহায়তা চান। বলেন-‘আমি বালু নিতাছি,তুমি ঢাকায় ফোন দিছ। তোমার নাম্বার ওইখান থেকে দিছে। মামারে সহযোগিতা করবা,ডিসটার্ব করলে কেমন হয়না।’ এই ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে রোববার দুপুরে যোগাযোগ করলে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন জানিয়ে এনিয়ে সার্ভেয়ারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সার্ভেয়ার মো: ফারুক হোসেন জানান- ২২ ও ২৫ শে জুন মোট ১২ জনকে আসামী করে এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী বালু বিক্রিতে তার জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আদালতে রীট করেছেন জানিয়ে বলেন, এরশুনানী হলে আদেশ তার পক্ষেই আসবে। আদেশ পেলে বালুতো বিক্রি করতেই পারবো।