,
শিরোনাম:
১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় উদ্বোধন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা নাসিরনগর সরকারি কলেজে ছাত্রদলের মতবিনিময় ও লিফলেট বিতরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংর্ঘষ, আহত অর্ধশত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা বানিজ্য \ কাজ হচ্ছেনা পুলিশের সর্তক বিজ্ঞপ্তিতে \ জনমনে আতঙ্ক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু শিবির ও শীত বস্ত্র বিতরন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন মাদক পাচারকারী গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মা সহ ২ কন্যা সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু

কিশোরীকে নিয়ে মা ও সরাইল পুলিশের একি কাণ্ড

Sarail PicSamia 30.05.2020
মোজাম্মেল চৌধুরী : আতঙ্ক স্কুল ছাত্রী সামিয়ার চোখেমুখে। ধর্ষিত হয়েছে সে,মামলা কড়া করতে এই বক্তব্য দেয়ার জন্যে চাপ দেয়া হচ্ছে তাকে। তা না হলে আবারো চট্টগ্রাম (নিরাপত্তা হেফাজতে) পাঠানো হবে বলে ভয় দেখানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তাকে ও  তার পরিবারকে হয়রানী থেকে বাঁচানোর আবেদন জানান সামিয়া। বলেন,আপন চাচা-চাচী ও প্রতিবেশীদের ঘায়েল করতে মা শাহেনা বেগম ব্যবহার করছে তাকে। ২৬ দিন নিরাপত্তা হেফাজতে থেকে বাড়িতে আসার ২/৩দিন পরই মা তাকে নিয়ে যান আবারো উকিলের কাছে। মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিতে মা আর উকিলের চাপ,থানা-পুলিশের ভয়ভীতি, নিরাপত্তা হেফাজতে দিনগুজরানে বিপর্যস্ত এই কিশোরী। এরআগে এই নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয় । সব মিলিয়ে আতঙ্ক বাসা বেধেছে তার মনে। পড়াশুনা উঠেছে লাঠে।
সরাইলের টিঘর গ্রামের প্রবাসী আবু সায়েদ মিয়ার মেয়ে সামিয়া আক্তার(১৪)। স্থানীয় ব্লুবার্ড স্কুলের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী সে।
ওদিকে একের পর এক মামলা নিয়ে সরাইল থানা পুলিশ হামলে পড়ছে শাহানার আক্রোশের শিকার তার ভাসুর-জা’র পরিবারের ওপর। এরআগে ওই পরিবারের ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে আসামী বানিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে ওই থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এএসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। বদলী হয় আরেক দারোগা। কিন্তু হয়রানী থেকে পরিত্রান মিলছেনা দরিদ্র কাশেম মিয়া ও আবদুস সাত্তারের পরিবারের। শাহেনার কথাতেই চলছে পুলিশ।
মেয়ে সামিয়াকে অপহরনের অভিযোগে  শাহেনা গত ২৯শে মে সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে টিঘর গ্রামের ইয়াছিন মিয়া(২২)সহ ৭ জনকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে সামিয়ার দুই চাচা কাশেম মিয়া ও আবদুস সাত্তার মিয়াকে আসামী করা হয়। আবদুস সাত্তার ইতিপূর্বে এই থানায় কর্মরত এএসআই হেলালের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বাদী।
অভিযোগ উঠেছে সামিয়া অপহরন মামলা নিয়েও কারিশমা দেখিয়েছে পুলিশ। ২৯শে মামলা রেকর্ড হলেও তার একদিন আগেই আসামী ইয়াছিন মিয়া ও ফয়েজ মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সামিয়াকে থানায় ডেকে এনে উদ্ধার দেখানো হয়। ভয়ভীতি দেখানো হয় অপহরন-ধর্ষনের স্বীকারোক্তি দিতে।  এতে রাজী না হওয়ায় পরদিন তাদের ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দীতে সামিয়া তাকে কেউ অপহরন করেনি এবং সে নিজেই তার এক আত্বীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলো বলে জানায়। আদালতে সামিয়ার  মা মেয়েকে জিম্মায় নেয়ার আবেদন করলে মেয়ে তার জিম্মায় যেতে রাজি হয়নি। এরপরই নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
অপহরন মামলা দায়ের হওয়ার আগে ২৭শে মে সামিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় সামিয়া। এতে তার মা শাহেনা বেগম জোর করে রবিন নামে এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ করে। বিয়েতে তার প্রবাসী পিতা মো: আবু ছায়েদের কোন সম্মতি নেই বলেও সে উল্লেখ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরাইল থানার ওসি ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষযটি তদন্ত করতে বলেন। কিন্তু এই অভিযোগের তদন্ত বাদ রেখে ওসি শাহেনার দেয়া অপহরন মামলা রেকর্ড করেন। ২৯শে মে মামলা হলেও অপহরন ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ই মে। মাঝের ১৪ দিন সামিয়া কোথায় ছিলো, তার মা কেন তখন আইনী পদক্ষেপ নেননি এসবের কোন কিছুই তদন্ত করেনি পুলিশ।
জানা যায়,গত বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর বাড়ির নলকূপের পানি ব্যবহার করা নিয়ে শাহেনার সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন তার জা আবদুস সাত্তারের স্ত্রী নূরজাহান বেগম। এ ঘটনায় শাহেনা তাকে মারধোর ও স্লীলতাহানির অভিযোগ এনে পরদিন সরাইল থানায় একটি মামলা দেন। যাতে ভাসুর আবদুস সাত্তারের পরিবারের ৮ জনকে এবং আরেক ভাসুর আবুল কাসেমের স্ত্রীকে আসামী করা হয়। মামলার আসামীদের মধ্যে সাত্তার ও তার ছেলে জাবেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১৫ই অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শাহেনা প্রাননাশের হুমকীতে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন বলে শিশু ইব্রাহিমসহ ভাসুর আবদুস সাত্তারের পুরো পরিবার এবং আরেক ভাসুর আবুল কাশেম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ইউএনও সেটি থানায় পাঠালে ওসি তা ডায়েরীভূক্ত(ডায়েরী নং ৬৮১/১৯) করে এএসআই মো: হেলাল চৌধুরীকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এই অভিযোগটি যখন থানায় দেয়া হয় সেসময় জেলে ছিলেন আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে জাবেদ। কিন্তু তাদেরকে অভিযুক্ত করে সরাইল থানায় নন এফ আই আর প্রসিকিউশন নং ৬৫/১৯,তাং ১৭/১১/২০১৯ইং দাখিল করেন এএসআই মো: হেলাল চৌধুরী। শুধু তাই নয় এতে সাত্তারের ১০ বছর বয়সী শিশু ইব্রাহিমকেও আসামী বানিয়ে দেন ওই এএসআই। পারিবারিক বিরোধে আবুল কাশেম ভাই সাত্তারের পক্ষ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে ৯ই নভেম্বর সরাইল থানায় শাহেনা বেগম একটি ধর্ষন চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
সামিয়া জানায়, আমাকে কেউ অপহরন করেনি। এরপরও পুলিশ আমার চাচাতো ভাই ও চাচাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আমি গেলে তাদের ছেড়ে দেব বলে আমাকে থানায় নিয়ে আটক করে। ওরা আমারে অপহরন-ধর্ষন করছে এই কথা বলার জন্যে ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমি ২৬ দিন জেলে ছিলাম(নিরাপত্তা হেফাজতে)। সেখান থেকে আসার পর আম্মু আমাকে নিয়ে উকিলের কাছে যান। মামলা আরো কড়া করার জন্যে। তাদেরকে ৭ বছর জেল খাটাবে। আমাকে বলেছেন তারা ধর্ষন করেছে এই কথা বলার জন্যে। তা না হলে আমাকে আবার জেলে পাঠাবে।
দেশে স্ত্রীর এই কান্ডকীর্তিতে দুশ্চিন্তায় সৌদি প্রবাসে ঘুম হারাম সামিয়ার বাবা আবু ছায়েদের। ফোনে বলেন, এরআগে আমাকে না জানিয়ে গোপনে আমার বড় মেয়েকে এক ডাকাতের কাছে বাল্য বিয়ে দিয়েছে শাহেনা। এনিয়ে ঝগড়া হলে সে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমার মেঝ মেয়ে সামিয়াকে আমি তার সাথে যেতে দেইনি। তাকেও শাহেনা এক ডাকাতের সাথে বিয়ে দিতে তৈরী হয়। আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করেনি। গত ২৪ মে এস আই খলিল ১২ জন পুলিশ নিয়ে গিয়ে আমার শিশু কন্যাকে ধরার জন্যে এক কিলোমিটার পর্যন্ত ধাওয়া করে। আমার স্ত্রী অন্যের প্ররোচণায় এপর্যন্ত আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে ৫টি মিথ্যা মামলা করেছে।
অপহরন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. খলিলুর রহমান বলেন,আসামী পক্ষ এসব কথায় বলবে। মামলা রেকর্ড ওসি করেন জানিয়ে এব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন-মা মেয়েকে পাচ্ছেনা। মা অপহরনের অভিযোগ দিলো আমরা মামলা নিয়ে ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার করি। ইউএনও’র কাছে কিশোরীর দেয়া অভিযোগের তদন্তের বিষয়েও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি তার কাছে।
শেয়ার করুন

Sorry, no post hare.