মোজাম্মেল চৌধুরী : প্রত্নতত্ব সম্পদ ‘হাতিরপুল’, প্রায় ৩ কিলোমিটারের বেশী দীর্ঘ কবরস্থান ছাড়াও গুরুত্বপূর্ন আরো অনেক স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বাড়িউড়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ফোর লেনে সম্প্রসারন করার কাজে আপত্তি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব স্থাপনা বাদ রেখে দক্ষিনপাশ দিয়ে সড়ক সম্প্রসারন করার দাবী জানান। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনেও মানববন্ধন করেন তারা। এই দাবীতে তারা এরআগে প্রকল্প পরিচালক এবং জেলা প্রশাসকের কাছে গনস্বাক্ষরিত আবেদন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো: হাবিবুর রহমান। এতে বলা হয়,তাদের এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও বসতভিটা,বাজার নষ্ট করে মহাসড়ক প্রশস্ত করন কাজের খবরে তার উদ্বিগ্ন। বাড়িউড়া মহাসড়কের উত্তরপাশে একটি কবরস্থান রয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কবরস্থানটি তিনশো বছরের পুরনো। সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ও সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ,বাড়িউড়া,ইসলামাবাদ,বচিউড়া এলাকার মানুষের মরদেহ সমাহিত করা হয় এই কবরস্থানে। কবরস্থানটির বয়স আনুমানিক তিনশো বছর। এটি ছাড়া সাধারনের জন্যে এলাকায় আর কোন বৃহৎ কবরস্থান নেই। তাছাড়া বারিউড়ায় প্রতœতত্ব¡ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন হাতিরপুল নামে একটি প্রতœতত্ব সম্পদ রয়েছে। যা দূরদূরান্ত থেকে দর্শন করতে আসেন মানুষ। কথিত আছে সরাইল থেকে হরষপুর যাতায়তে দেওয়ানরা এখানে হাতির বিশ্রামের জন্যে একটি ছাউনি নির্মান করেন। যা পরে হাতিরপুল নামে পরিচিত হয়ে উঠে। বারিউড়া বাজার জামে মসজিদটিও মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। প্রায় চল্লিশ বছর আগে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। তাছাড়া রয়েছে বাড়িউড়া বাজার। লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে বারিউড়া গ্রামে জাঙ্গাল হাটি ও নোয়াবাড়ি নামে দুটি মহল্লা রয়েছে। বিদ্যমান মহাসড়ক নির্মাণে মহল্লা দুটির প্রায় অর্ধেক জায়গা বহুআগেই সড়ক ও জনপথ অধিগ্রহণ করে । এরপর থেকে বাদবাকী জায়গা বড়জোড় ৩০ থেকে ৫০ পয়েন্ট ভিটে বাড়িতে তারা কোনরকমে বসবাস করে আসছেন। এ দুটি মহল্লায় প্রায় নয়শত পরিবার তথা প্রায় সাড়ে চার হাজারের উপরে লোকসংখ্যা রয়েছে। তাদের সত্তর ভাগই দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। ফোর লেন করার জন্যে তাদের শেষ সম্বল অধিগ্রহন করা হলে তাদের মাথাগুজার ঠাই থাকবেনা। তারা অধিগ্রহনে যে মুল্য পাবে তা দিয়ে এলাকায় কোন জায়গাও ক্রয় করতে পারবেনা। এখানে সরকারি রেটে জায়গার দাম খুবই কম। কিন্তু জায়গা-জমির প্রচলিত বাজার মুল্য সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে প্রায় ১০ /১২গুন বেশী। মহাসড়ক লাগোয়া দক্ষিণ পার্শ্বে ফোর লেন করার মত সড়ক ও জনপথ বিভাগের পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় তারপরও কোন কারনে এসব স্থাপনা নষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা তাদের বোধগম্য হচ্ছেনা। সড়কটি দক্ষিনপাশে সম্প্রসারিত হলে সরকারের বিরাট অর্থেরও সাশ্রয় হবে। কারন সেখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগেরই নিজস্ব জায়গা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বজলুর রহমান মাষ্টার,ডাক্তার আবু ছাদেক,আবুল কাসেম মুন্সি,মো: আবদুল কুদ্দুস,মো: আবুল হাশেম,মো: আল আমিন,মো: হাবিব মিয়া,মো: সাব্বির মিয়া।
শেয়ার করুন