খবর সারাদিন রিপোর্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার চানপুর গ্রামের আলোচিত শরীফ খাঁ হত্যা মামলার আসামি তিন সহোদরকে ফাঁসি এবং তাদের বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এই রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আখাউড়া উপজেলার আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের উত্তর পাড়ার আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁর ছেলে জাকির খাঁ (৪৭), মাহবুব খাঁ (৩৭) ও গাজী খাঁ (৩১)। যাবজ্জীবন পাওয়া আসামি হলেন একই এলাকার মৃত আলি নোওয়াজ খাঁর ছেলে আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁ (৭২)।
রায় ঘোষণার সময় আমানত খাঁ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন সহোদর পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন ভাই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে আসামিদের সঙ্গে শরীফ খাঁর পরিবারের বিরোধ চলছিল। স্থানীয় মাতবররা এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করলেও আসামিরা সালিশের রায় অমান্য করেন।
২০১৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শরীফ খাঁর বাড়ির একটি গাছ কাটতে থাকলে তিনি এতে বাধা দেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে শরীফ খাঁ, তার ছেলে রবিন খাঁ, রাসেল খাঁ, স্বজন মোশারফ খাঁ, বাদশা খাঁ ও আছিয়া বেগমকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেদম মারধর করেন। আসামিরা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে শরীফ খাঁকে মারাত্মক জখম করে চলে যায়।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শরীফ খাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় শরীফ খাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম প্রকাশ লিপি ওইদিন রাতেই জাকির খাঁ, মাহবুব খাঁ, গাজী খাঁ, আমানত খাঁ ও আমির খাঁর নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা থেকে মামলাটি আখাউড়া থানার এসআই মো. আকরামুল হককে তদন্ত করার জন্য দেওয়া হয়। তদন্তকালেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মামলার আসামি আমির খাঁ (২৮) নিহত হন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে আকরামুল ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল জাকির, মাহবুব, গাজী ও আমানত খাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। পরে আদালত মামলার ১১ জন সাক্ষী, ৩ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি অ্যাডভোকেট আজাদ রাকিব আহমেদ তুরান এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহ পরান।
এই ব্যাপারে মামলার বাদী ও নিহত শরীফ খাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
তিনি বলেন, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া তিন আসামি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। আমি তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।
এই ব্যাপারে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রাকিব বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহ পরান বলেন, রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ । আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
তিনি বলেন, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিরা বর্তমানে বিদেশে আছেন। তারা বিদেশ থেকে ফিরে এলে তাদের পক্ষেও আপিল করবো।
শেয়ার করুন