খবর সারাদিন রির্পোট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ভুলের জন্য প্রয়োজনীয় ফি দিয়েও এক ছাত্রীর আলিম (এএইচএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরীক্ষার কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও প্রবেশপত্র হাতে পায়নি এই শিক্ষার্থী।
রোববার বিকেলে প্রতিকার চেয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী জান্নাত।
চলতি বছর অনুষ্ঠেয় (এইচএসসি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রীর নাম জান্নাত আক্তার। জান্নাত পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের চা বিক্রেতা মোশারফ হোসেনের মেয়ে। উপজেলার আওয়ালিয়ানগর মােহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার আলিম শাখার ছাত্রী। এই বছর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির গাফিলতি ও অনিহার কারণে তার পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ইউএনও কাছে দেওয়া ওই অভিযােগের অনুলিপি মাদ্রাসাবাের্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি), জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য আওয়ালিয়ানগর মােহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের জন্য ৩ হাজার টাকা দেয় এই ছাত্রী। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হক ওই ছাত্রী ও তার বাবার সামনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের টাকা নিজের টেবিলের ড্রয়ারে রাখেন। সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত হয়। ওই মাদ্রাসা থেকে এএইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার নিয়মিত ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু ফরম পূরণের টাকা দিলেও তাদের মধ্যে জান্নাত ছাড়া ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড সম্পন্ন হয়। অধ্যক্ষ মুঠোফোনে জান্নাতের বাবাকে বিষয়টি জানান। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার খবর পেয়ে গত ৮ আগস্ট বাবাকে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে জান্নাত। টাকা না দেওয়ায় ফরম হয়নি বলে অধ্যক্ষ তাদের জানান। ফরম পূরণের টাকাসহ কাগজপত্র অধ্যক্ষের কাছে দিয়েছেন এবং তিনি (অধ্যক্ষ) সেই টাকা ড্রয়ারে রেখেছেন বলে জানায় জান্নাত। অধ্যক্ষ তখন তাদের সামনেই টেবিলের ড্রয়ার খুলে টাকাসহ কাগজপত্র দেখতে পান। অধ্যক্ষ তখন নিজের ভুল স্বীকার করে পরের দিন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে ফরম পূরণ করে দিবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু রোববার দুপুর পর্যন্তও তার ফরম পূরণ হয়নি। এইচএসসি (আলমি) পরীক্ষা ১০দিন পিছিয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষকে ফরম পূরণ করে দিতে অনুরোধ করেন এই ছাত্রী। কিন্তু অধ্যক্ষ কিছুইতে আর ফরম পূরণ সম্ভব না এবং সময় শেষ বলে জান্নাতকে জানান।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল হাই বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রেখে ভুলে গেছেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছেন। মেয়েটা কি পরিক্ষা দিতে পারবেনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছে এই বছর জান্নাত পরিক্ষা দিতে পারবেনা।
জান্নাত আক্তার বলেন, মাদ্রাসার হুজুর (অধ্যক্ষ) ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি। আমার বাবা ও আমি অনেক আকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু তাদের মন গলেনি। তাই সহায়তা চেয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত দিয়েছি। জান্নাত বলেন, আমি এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষা দিতে চাই। আমি যথাসময়ে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু মাদ্রাসার হুজুরের (অধ্যক্ষ) ভুলের জন্য কি আমি পরীক্ষা দিতে পারব না। আমার দোষ কোথায়? কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি কেন ভুগব। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযােগ করে দিয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও পরিচালনা কমিটির অবহেলার বিষয়টি সুষ্ঠভাবে
দেখার জন্য ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে জান্নাত। জান্নাত সোমবার জেলা প্রশাসকের অফিস ভবনে যাবেন বলেও জানান।
জান্নাতের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, আমি চা বিক্রি করে মেয়েটাকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এখন বলছেন তিনি ফরম পূরণ করতে দিতে পারবে না। আর মাদ্রাসার সভাপতি বলছেন কোনো সমস্যা নেই। আগামী বছর পরীক্ষা দিতে। গরীব বলে কি কোনো বিচার পাব না।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদ বলেন, বাের্ডে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি ফরম পূরণ হয়ে যাবে। আগামীকাল বোর্ডে যাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল তো মানুষের হতেই পারে। ফরম পূরণের জন্য চেষ্টা করতেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিল বলেন, ফরম পূরণসহ প্রবেশপত্রের জন্য মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখান থেকে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করছি এই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী যেন পরীক্ষা দিতে পারে এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম বলেন, মেয়েটাকে কাল মেয়ের গার্ডিয়ানের সাথে দিয়ে জেলা শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কাছে পাঠান। আমি এখনই শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি যেন গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনিও ব্যবস্থা নেয়।
শেয়ার করুন