ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুল-(১০) ও ভাগ্নি শিফা আক্তার-(১৪) হত্যা মামলায় বাদল মিয়া-(৩০) নামে এক যুবককে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবদুল হান্নান এই রায় প্রদান করেন। রায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাদল মিয়া কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খোদে-দাউদপুর গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে।
খুন হওয়া মেহেদী হাসান কামরুল ও শিফা আক্তার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের সন্তান।
আদালতের নথিসূত্রে জানা গেছে, বাহরাইন প্রবাসী বাদল মিয়া ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে ফিরে আসেন। গ্রামে গোষ্ঠীগত দাঙ্গার একটি মামলায় আসামি হওয়ার কারণে বাঞ্ছারামপুরের ছলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে তার বোন হাসিনা আক্তারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাদল মিয়া প্রবাসে থাকাকালে দোকান করার জন্য ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। এর মধ্যে তিন লাখ টাকা ফেরত দেন বাদল। বাকি ১০ লাখ টাকার জন্য কামালের সাথে মনোমালিন্য চলছিল তার। টাকার জন্য একপর্যায়ে বাদলকে থাপ্পড় মারেন কামাল উদ্দিন। এ ঘটনায় প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন বাদল।
এরই জেরে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে কামালের ছেলে কামরুল তার মামা বাদলের রুমে যায়। বাদল তখন রুমে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিলেন। এ সময় প্রতিশোধপরায়ন হয়ে কামরুলের হাত-পা বেঁধে গলা কেটে তাকে হত্যা করে বাদল। পরে মরদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। ভাগ্নি শিফা রুম ঝাড়– দিতে গিয়ে দেখে ফেললে তাকেও মারার জন্য ধস্তাধস্তি করে বাদল। একপর্যায়ে শিফাকে ধাক্কা মেরে বাথরুমে নিয়ে তাকেও গলা কেটে হত্যা করে মরদেহ অন্য একটি রুমের খাটের নিচে রাখেন। এরই মাঝে ঘাতক বাদল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর বাদল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ ঘটনায় নিহতদের বাবা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে বাদলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম জানান, পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। আমরা সাক্ষীদের যথা সময়ে আদালতে হাজির করেছি। যুক্তিতর্ক ও সাক্ষি প্রমাণ শেষে আদালত অভিযুক্ত আসামিকে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। রায় প্রদানকালে আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।