খবর সারাদিন রিপোর্টঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী নির্যাতনের মামলা মীমাংসার সালিসে কথা কাটাকাটির জেরে তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় দেয়া বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে পুলিশ সুপারকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এ সময় তারা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলসহ জড়িতদের আজকের মধ্যেই গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দেন। পাশাপাশি মফিজুরসহ জড়িতদের বার কাউন্সিল সনদ বাতিলের দাবি জানান।
গতকাল সোমবার বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয়, জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোঃ আতাউল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাসরিনগর উপজেলায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাস্থল থেকে নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান খোকনকে আওয়ামীলীগ নেতার ২০২৩ সালের আইসিটি অ্যাক্টের কালো আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনা জানতে পেরে তাকে ছাড়াতে আমরা নাসিরনগরেও যাই। সেখান থেকে দ্রুত পুলিশের গাড়িতে আদালতে যাই আমি।
তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আসাদুজ্জামানকে জামিন দেন আদালত। জামিনের পর জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলার সংগঠক জিহান মাহমুদ, সদর উপজেলার সংগঠক হাসান নাছিমুল ওরফে রাসেল ও আমি
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে যাই। কসবা উপজেলার ফয়েজ মিয়া নামে আমার এক আত্মীয় পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদেরকে সেখানে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, পরিচয় পর্বের মধ্যেই জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলের ইশারাই আইনজীবী মোঃ মিনহাজ ও তার পিয়ন কবিরসহ সাথে থাকা আরো কয়েকজন আইনজীবী ও কিছু সাঙ্গপাঙ্গ আমাদের মারধর শুরু করে। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে জিহান ও হাসানকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে কক্ষের দরজা-বাতি বন্ধ করে দেয় মফিজুর রহমান বাবুল। কক্ষে আটক থাকা অবস্থায় আমার ফেসবুক লাইভ থেকে জানতে পেরে জেলার আন্দোলনকারী সহযোদ্ধা ও পুলিশ আমাদের উদ্ধার করতে আসে। পরে জানতে পারি মফিজুর রহমান বাবুল জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে খালার পারিবারিক ঘটনা নামে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে মফিজুর রহমান ও তার সহযোগী পুলিশ সুপার। কারণ আমার মায়ের কোনো বোন নেই। দেশের আইন-শৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম আদালতের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজকোর্টে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।
তিনি বলেন, উক্ত ঘটনায় পুলিশ সুপারের মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর ও তার সহযোগী আওয়ামী দোসরদের আজকের মধ্যেই গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিতের আল্টিমেটাম দেন। মফিজুরসহ তার সঙ্গে জড়িতদের বার কাউন্সিল সনদ বাতিল করতে হবে।
আইনজীবীর সাথে খারাপ ব্যবহার, সালিসে যাওয়া ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে ভাঙচুরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সিসিটিভির ফুটেজ আছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি, ভাংচুর করি না। এজন্য আমরা নতুন দল করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, একটি নারী নির্যাতন মামলায় দুই পক্ষের আইনজীবী আমার কক্ষে সালিসে বসে। বিলম্ব হয়ে যাওয়ায় অন্য আরেকদিন সালিসে বসবেন বলে সবাইকে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে তারা মিনহাজের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। তাদের ঝগড়া থামিয়ে অন্যদিন বসব বলে আমি চলে যাই। পরে বাদী ও বিবাদীপক্ষের মধ্যে আবার ঝগড়া হয়। তারা এক পর্যায়ে আমার কক্ষ তছনছ ও ভাংচুর করে। মামলার ফাইল নষ্ট করে দেয়। পরে প্রশাসন এসে কক্ষটি সিলগালা করে দেয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। আমি সরকারি চাকুরি করি, কারো অধীনে চাকুরি করি না।
শেয়ার করুন