মোজাম্মেল চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে আড়াই হাজার টাকা প্রাপ্তির জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার একাধিক জনপ্রতিনিধি অনেক অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের কথা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে ২১ জুন কাউন্সিলর মো. আবু জাহের, ২২ জুন কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানিক মিয়া, ২৩ জুন খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খান, ২৪ জুন বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভ‚ঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অনুলিপিও দেয়া হয়।
কসবা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাউন্সিলর মো. আবু জাহেরে বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে ১১টি নাম দিয়ে এদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া তাঁদের মধ্যে একাধিক বিত্তশালী আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আত্মীয়করণ, বিত্তশালী, নিজের অনুসারী, পৌরসভার বাসিন্দা, ভুল তথ্য দিয়ে নাম অন্তভর্‚ক্তকরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সঙ্গে ৩৪ জনের নামের তালিকা জুড়িয়ে দেয়া হয়।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৩৩ জনের নাম তালিকায় উঠানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। স্বজনের নামের পাশে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, বিত্তশালীদের নাম তিনি অন্তভর্‚ক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চেয়ারম্যানের তালিকায় মুসলেম খানের ছেলে শাহাদাৎ খানের নাম থাকলেও নম্বর দেয়া আছে খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ খাঁনের।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে, বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন ভ‚ঁইয়ার বিরুদ্ধে। তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ১২০ জনের নাম তালিকায় অন্তভর্‚ক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি প্রবাসী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিত্তশালীদের নাম রয়েছে।
কসবার পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের তালিকার অনিয়ম নিয়ে যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারা এসব অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সানু নামে একজন কাগজে কলমে পৌরসভার বাসিন্দা হলেও ছোট বেলা থেকেই সে পশ্চিম ইউনিয়নে থাকে। এছাড়া আমার যে আত্মীয় স্বজনের কথা বলা হচ্ছে তারা খুব গরীব।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ বলেন, ‘দুই একটা ভুল থাকতে পারে। আমার আত্মীয় খুব গরীব শাহাদাত খানের নামের সঙ্গে যে আমার ফোন নম্বর গেছে সেটা আমি জানি না। আমি তালিকা করে শুরুতেই টানিয়ে দিয়েছি। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা হয়। এরপরও যদি কোনো মেম্বার তালিকা দিতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি করে থাকে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল-মামুন ভ‚ঁইয়া বলেন, ‘মেম্বারদের মাধ্যমে নাম এনে সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তালিকা দেয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই-বাছাই করে। যদি তখন আমাকে জানানো হতো তাহলে বাদ দিয়ে দিতে পারতাম। তবে নজরে আসার পর একজন মেম্বারের স্বামী, আরেকজন মেম্বার ছেলের নাম বাদ দিয়েছি। তবে তালিকায় আমার কোনো আত্মীয় স্বজনের নাম নেই।’
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবু জাহের বলেন, ‘আমার আপন কোনো আত্মীয়-স্বজনের নাম থাকলে কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করবো। মূলত মেয়রের পক্ষের কাউন্সিলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় সেগুলোকে ঢাকতে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমার আপন কেউ তালিকায় থাকাটা প্রমাণ করতে পারলে আমি কাউন্সিলর থেকে পদত্যাগ করবো।
শেয়ার করুন